 
              প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
 
                 জাকির হোসেন
চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। তীব্র তাপদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
এরইমধ্যে হিটস্ট্রোকে দামুড়হুদায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত রোগের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৌশল নির্ধারণে আগামীকাল দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এদিকে জেলার দামুড়হুদায় হিটস্ট্রোকে জাকির হোসেন (৩০) নামের যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত যুবক জাকির হোসেন উপজেলার ঠাকুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে এবং ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, জাকির হোসেন আজ সকাল ৭টার দিকে জমিতে পাটবীজ বোনার জন্য মাঠে যান। প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে তিনি মাঠেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা জানান, নিহত জাকির হোসেনকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, আজ শনিবার বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটা অতি তীব্র তাপপ্রাহ।
তিনি আরও বলেন, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে এমন অবস্থা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর উপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে। চুয়াডাঙ্গা পাশাপাশি হওয়ায় এ জেলাতে বেশি গরম পড়ছে। এছাড়া ঈশ্বরদীর উপজেলার পাশ দিয়ে দেশের বৃহত্তম পদ্মা নদী বয়ে গেছে। আর চুয়াডাঙ্গা জেলাতে উল্লেখযোগ্য তেমন নদী নেই, যা আছে তা-ও মৃতপ্রায়। বেশি নদী ও নদীতে পানি থাকলে এমন অবস্থা হতো না বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ডায়রিয়াজনিত কারণে ৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ চরম আকার ধারণ করেছে। গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। তিনি বলেন, বাসী, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তরল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। বের হলেও ছাতা বা অন্যান্য প্রটেকশন নিয়ে বের হতে হবে।
জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এর আগে দুই বিঘা ভূট্টা জমিতে মোটর দিয়ে সেচ দিতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ওই জমিতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে।
আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ডম্বলপুর গ্রামের কৃষক ফাহিম ফয়সাল জানান, মাঠে সাড়ে ৬ বিঘা আগাম বোরো ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ধান পেকে গেছে এক সপ্তাহ আগেই। তাপদাহে তিনি শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে মাঠেই ঝরে পড়ছে ধান।
আলমডাঙ্গায় তীব্র তাপে উপজেলায় স্বাভাবিকের চাইতে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কিছু কিছু নলকূপে পানি মিলছে না। আর কিছু নলকূপে পানি মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রচণ্ড গরমে আবাদি জমিতে ধান ও সবজি খেত শুকিয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে ধানে চিটা পড়ে বিপুল ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
আলমডাঙ্গা পৌর শহরের ডাব বিক্রেতা আজিবর রহমান বলেন, গত ১ মাস আগেও ভালো ডাবের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় চাহিদা বেড়েছে, তার সঙ্গে দামও দ্বিগুণ বেড়েছে। চাহিদা থাকলেও গরমে শহরে ক্রেতা না থাকায় বিক্রি কমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে পেপে চাষ আছে। প্রতিদিনই পানি দিতে হচ্ছে। তবে বাঁচাতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, গাছ মরে যাচ্ছে। পাতা ও ফুল ঝরে যাচ্ছে। এছাড়া বড় গাছ গুলোতে প্রচণ্ড রোদের কারণে পেপে শুকিয়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।
সদর উপজেলার গাইদ ঘাটের জিয়ারুল বলেন, ফসল আর হচ্ছে না। বেগুন, পেপে, মরিচ সব ঝরে যাচ্ছে। পানি দিলেও হচ্ছে না। পানি আর কত দিবো, কয়দিন দিবো। খরচ করতেও হিমশিম খাচ্ছি।
ইটভাটা শ্রমিক মিয়ারুল বলেন, প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে হচ্ছে। গরম পড়লে আর কি করবো। পেটের তাগিদেই কাজ করতে হবে। সকাল ৬-২টা পর্যন্ত কাজ করি। মিয়াকে বললাম একটা পর্যন্ত কাজ করি। মিয়া শুনলো না।
চুয়াডাঙ্গার কেদারগঞ্জ পাড়ার রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী ইনতাজুল ইসলাম পানু বলেন, গরমে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। তাই আমাদের রড ও সিমেন্ট বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা মানুষকে সচেতন করছি। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মোতাবেকও চলতে বলছি। এ বিষয়ে জেলা সদরসহ চারটি উপজেলাতেই প্রচারণা চলছে। অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
আগামী রোববার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আমরা পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণ করবো বলে জানান জেলা প্রশাসক।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      