• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লকডাউনে শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-পরিবহন নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২১, ১২:০৫ এএম

লকডাউনে শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-পরিবহন নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। এ সময় সব সরকারি বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন-শপিংমল। তবে চালু থাকবে শিল্পকারখানা। শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পরিবহন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও।

বুধবার (৩০ জুন) সকালে শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকার নির্দেশ দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে এই লকডাউন।

এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পড়তে হবে পরিবহন সংকটে। থাকছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। শ্রমিক নেতারা বলছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার সবার আছে। তবে কেন বাদ পড়ছে শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা? লকডাউনে শিল্প কারখানা খোলা রাখায় ঝুঁকি ভাতা ও পরিবহন ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে তারা। 

সব বন্ধ রেখে শিল্প কারখানা খোলা রাখায় সরকার সীমাহীন অপরাধ করছে বলে মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন।

তিনি সিটি নিউজকে বলেন, সরকার অত্যন্ত দায়িত্ব-জ্ঞানহীন তার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার অধিকার আছে। সেখানে শুধু মাত্র শিল্পকারখানা শ্রমিকদের ঝুঁকি রাখা সরকারের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনের পরিচয়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের সবচেয়ে মূল্যবান শ্রমশক্তি। এই শ্রমশক্তিকে ক্ষয় করে রাতারাতি মুনাফা অর্জনে মালিকদের যে পাঁয়তারা তার সঙ্গে সরকার সব সময় তাল মিলিয়ে চলে। এটা সরকারের শ্রমিক বিদ্বেষী ভূমিকা।

তিনি বলেন, প্রথমত আমরা এই পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস বন্ধ রাখার পক্ষে। প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে- সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে, ঝুঁকি ভাতা হতে হবে অভারটাইমের (অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক) হারে। পাশাপাশি লকডাউনে পরিবহন নিয়ে শ্রমিকদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে।

এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দেয় পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

এ বিষয়ে বিকেএমইএ'র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সামনে ঈদ। ঈদের সময় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার চাপ থাকে। উৎপাদন বন্ধ থাকলে এই চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বর্তমানে নতুন করে ক্রয়াদেশ আসছে। এই মুহূর্তে কারখানা বন্ধ থাকলে ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে।

গার্মেন্টসসহ সব কারখানা বন্ধ রাখা উচিত ছিল। তারপরও সরকার পোশাক শিল্পকে স্পেশাল সার্ভিসের সঙ্গে তুলনা করে। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।

তিনি সিটি নিউজকে বলেন, লকডাউনে কারখানা খোলা রেখেছে। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের আসা যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা মালিকদের জিম্মায় না রেখে সরকারের অধিনে নেয়া উচিত। কারণ মালিকরা কখনোই স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা করবে না। পরিবহনের ব্যবস্থা করবে না। গত লকডাউনে তারা দায়িত্ব নেয়নি, এবারও তারা নিবে না। সে জন্য পরিবহনের বিষয়টা পুলিশ, বিজিবি বা সেনাবাহিনীর হাতে দিলে ভালো হত। পরিবহনের ব্যবস্থা না করলে শ্রমিকদের কয়েকগুণ ভাড়া বেশি লাগবে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলে এর প্রভাব পড়বে শ্রমিকের পরিবারে।

বাবুল আক্তার বলেন, শ্রমিকদেরও করোনা হয়। তাদের জ্বর আসলে ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খায়, টেস্ট করার মতো সুযোগ পায় না। কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না। গেট দিয়ে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি থাকে না, বাহির হওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি থাকে না। ভীতরেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যে পরিবেশে দরকার তা নেই। ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকছেই।

সম্রাট/নির্জন

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ