• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৭ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
এমপি আজিম খুনে শিমুলের লোমহর্ষক বর্ণনা

জীবনে অনেক লোককে খুন করেছি, কিন্তু কখনো খুব একটা অনুশোচনা হয়নি…

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম

জীবনে অনেক লোককে  খুন করেছি, কিন্তু কখনো খুব একটা অনুশোচনা হয়নি…

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘জীবনে অনেক লোককে ধরে ধরে জবাইসহ নানাভাবে খুন করেছি। কিন্তু কখনো খুব একটা অনুশোচনা হয়নি। সংসদ-সদস্য আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তার মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুমের পর অন্যরকম অনুশোচনা এসেছে। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মূল সমন্বয়কারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া হত্যার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় ডিবির রিমান্ডে থাকা অবস্থায় এমন অনুশোচনার কথা জানিয়েছেন শিমুল।

এদিকে এমপি আজিম হত্যার মূল সমন্বয়কারী আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালের দিকে সঞ্জীবা গার্ডেনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় সংসদ-সদস্যের দেহের টুকরো টুকরো কয়েক কেজি মাংস। 

এর আগে ঢাকায় ডিবির রিমান্ডে থাকা আমানুল্লাহ খুনের শুরু থেকে লাশ গুম পর্যন্ত সব ঘটনা ছক এঁকে ডিবিকে লিখিতভাবে জানায় খুনের এ সমন্বয়ক। 

ডিবিকে খুনের এই সমন্বয় জানান, এ অপরাধে যদি আমার ফাঁসি হয়, হোক। আমি সবই বলে দেব, কিছুই গোপন করব না।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাপ্রধান মো. হারুন অর রশীদ বলেছেন, যে উদ্ধার মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে, এর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। 

ডিএনএ টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলো সংসদ-সদস্য আনারের। 

মঙ্গলবার ডিবি হেফাজতে আমানুল্লাহ যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছে, কোনোটিই মিথ্যা মনে হয়নি ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তবে তথ্যগুলো খুবই স্পর্শকাতর। তাই এসব তথ্য অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছে কলকাতায় অবস্থানররহ ডিবির টিমের কাছে। আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা হচ্ছে কলকাতায় গ্রেফতার জাহিদ ওরফে জিহাদের মাধ্যমে। সে অনুযায়ীই কলকাতার বিভিন্ন স্থানে চলছে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশের যৌথ অভিযান।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সঞ্জীবা গার্ডেনস থেকে বাগজোলা খালের দূরত্ব খুব বেশি না। রাস্তা না চেনার কারণে অনেক দূর ঘুরে হাড়ভর্তি ট্রলি নিয়ে সেখানে যায় ঘাতক জিহাদ ও সিয়াম। যদিও আগে একবার ওই স্থানটি রেকি করেছিল জিহাদ। খালের যে পয়েন্টে (কাঠেরপুল) হাড়গুলো ফেলা হয়েছে সেই স্থানটি খুবই নির্জন। সেখানে সিয়াম বেশ কয়েকবার মিটিং করেছে। একদিন আমানুল্লাহকেও নিয়ে যায়। লাশ গুমের জন্য ওই স্থানটি আমানুল্লাহর খুব পছন্দ হয়। জায়গাটি এমন যে, সেখানে আস্ত লাশ ফেলে রাখলেও কেউ টের পাবে না।

এমপি আনারের হাড়গুলো গুম করার মূল দায়িত্ব ছিল সিয়াম ও জিহাদের ওপর। জিহাদ কলকাতায় গ্রেফতার হলেও সিয়াম এখনো পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে, সে নেপালে অবস্থান করছে। সিয়াম মূলত হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ডাইরেক্ট লোক। সে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।

আর জাহিদ ওরফে জিহাদ হাওলাদার হলো আমানুল্লাহর লোক। সে চরমপন্থি দলের সদস্য। একটি মামলার পলাতক আসামি হিসাবে সে চোরাপথে অনেকদিন আগে ভারতে চলে যায়। দীর্ঘদিন কলকাতায় অবস্থান করলেও আমানুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। পলাতক থাকায় সে সেখানে খুব একটা প্রকাশ্যে ছিল না। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা শাহীন, সেলিস্তি ও আমানুল্লাহ সঞ্জীবা ভবনে যাওয়ার পর সে সেখানে যায়। শুরুতে মূলত কাজের লোক হিসাবেই সেখানে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। বাসা থেকে একেবারেই বের হতো না। কারণ, তার নামে যেহেতু মামলা আছে, তাই বের হলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

প্রসঙ্গত, ১২ মে ভারত যান সংসদ-সদস্য আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে মর্মান্তিকভাবে খুন হন সংসদ-সদস্য আনার। 

বাসাটি খুনিরা ভাড়া নেয় ১১ মাসের জন্য। এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে দুই দেশেই।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ