 
              প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
 
                 
                            
              অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘প্রাইভেট সেক্টরের অনেকে ডিমান্ড করছে, ব্যাংক থেকে টাকা দেন-আরও ক্যাশ ইনসেনটিভ দেন-আরও ট্যাক্স কমিয়ে দেন। ট্যাক্স কমাতে কমাতে এমন অবস্থা হবে, কিছুদিন পরে বেতন-ভাতাও পাব না মনে হচ্ছে। সবাই বলে যে, ট্যাক্স কমিয়ে দেন। ট্যাক্সই দিতে চায় না কেউ।’
আজ সোমবার রাজধানীর ডিএসই ভবনে আয়োজিত বন্ড ও সুকুক মার্কেট নিয়ে সেমিনারে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
দেশের মানুষ কর দিলেও সেবা থেকে বঞ্চিত। এতে, তাদের রাগ থাকাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশে বেশি ট্যাক্স দিতে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ভালো সেবা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ট্যাক্স দেয়, কিন্তু সেবা পায় না। তাহলে লোকজন তো একটু গোস্সা করবেই। ট্যাক্স দিলাম আর সেবা পেলাম না?’
এ সময় অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সে জন্য প্রায়ই এনবিআর সদস্যদের বলি, একটু সেবা দেন। সেবা ভালো দিলে আমরা ট্যাক্স ফি-টাও বেশি দিতে পারি। সেবা দেবেন না, দশবার ঘোরাবেন, আপনি ফিও বেশি চাইবেন, এটা তো সম্ভব নয়।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্যাক্স, নন-ট্যাক্স রেভিনিউ আমাদের অনেক লো। আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টরের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের চাহিদা অনেক বেশি। বড় বড় প্রজেক্ট করতে বলেন। এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থায়ন করতে পারছি না। আমরা বলি, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। তারপর শিক্ষার কথা বলেন। টাকা কোথায়?’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সমস্যা হলো অর্থায়নের অভাব। আমরা যেখানে বসে থাকি, সরকারি লোকজন মনে করে, সবকিছু দিয়ে দেওয়া যাবে। প্রতিদিন বলে এই দেন, সেই দেন। অর্থের যতটা সামর্থ্য, সেটা আমরা পাচ্ছি না।’
অর্থ উপদেষ্টা বিমা খাতের দুর্বলতার কথাও তুলে ধরেন এবং একে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এর জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। একটি গতিশীল আর্থিক খাতে শুধু ব্যাংক নয়, বরং শক্তিশালী পুঁজিবাজার, বিমা খাত এবং বিশেষ ট্যাক্স ইনস্ট্রুমেন্টকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পুঁজিবাজার থেকে সব সময় মুনাফা আসবে—এমন ধারণা ভুল বলে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটিকে যদি কেউ নিয়মিত আয়ের স্থায়ী উৎস মনে করে, তবে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মূলধন বাজারে যেমন মুনাফার সুযোগ আছে, তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে যে শেয়ার ও বন্ড কেনা মানে কখনো কখনো ক্ষতিও ভাগ করে নেওয়া।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাত অতিমাত্রায় ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের উভয় পক্ষই ঋণ নেয়, প্রায়ই সেই ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যায়। এটাই বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি। ঝুঁকি ভাগাভাগির জন্য একটি কার্যকর পুঁজিবাজার ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে বুঝতে হবে—বন্ড, ডিবেঞ্চার ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সঙ্গে ঝুঁকি জড়িত। পুঁজিবাজার কোনো চিরস্থায়ী গ্যারান্টিযুক্ত আয়ের উৎস নয়। শেয়ারবাজারের ছোট বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, বিনিয়োগ করলেই মুনাফা নিশ্চিত, এই বাজারে যে ঝুঁকি আছে, তা তাঁরা মানতে চান না। ছোট বিনিয়োগকারীদের আরও ভালোভাবে শিক্ষিত করতে ডিএসই ও বিএসইসিকে উদ্যোগ নিতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, দেশে কর-জিডিপি অনুপাত সোয়া ৭ শতাংশ হলেও, ব্রাজিলে এ হার ২৬ শতাংশ। দেশে জনগণ কর দিলেও, কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দের কথা বলা হলেও, অর্থ সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, তারল্য সংকট কাটাতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার জন্য আলাদা বাজার তৈরি করতে হবে।
শেয়ারবাজারে ইসলামিক বন্ড ও সুকুক মার্কেটের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের উপর নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ারবাজারের দিকে নজর দিতে হবে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করা যায়নি বলেই দেশের বাইরে টাকা চলে গেছে বলেও জানান তারা।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      