প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:২১ পিএম
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ আশা ব্যক্ত করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, দীর্ঘ পরিক্রমার পর মামলাটির রায়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। সহকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। বিচার প্রক্রিয়ার সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি বাংলাদেশে অপরাধী যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদেরকে সঠিক পন্থায় আইনের আওতায় আনবো। আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ মামলা রায়ের জন্য চূড়ান্ত পর্বে উপনীত হয়েছে। আশ করছি, আগামী ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনায় প্রজ্ঞার প্রয়োগ করবেন।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির বিচারের প্রতি যে আকাঙ্খা ও তৃষ্ণা সেটির প্রতি আদালত সুবিচার করবেন বলে আশা রাখি। একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংগঠিত একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অবসান ঘটাবেন। শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা প্রতাশ্যা করছি, ভবিষ্যতের জন্য রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের রায় প্রদান করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।