প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫’ তুলে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চার জনের হাতে রোকেয়া পদক তুলে দেন তিনি।
বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্তরা হলেন, নারী শিক্ষায় (গবেষণা) ড. রুভানা রাকিব, নারী অধিকারে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকারে ড. নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণে (ক্রীড়া) রিতু পর্ণা চাকমা।
আজ ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অধিকার ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অবদান ও নারী জাগরণের অগ্রযাত্রায় অন্তহীন প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিবছর এ দিবস পালন করা হয়।
বেগম রোকেয়া সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণ ও নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জহীরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরী।
বেগম রোকেয়ার পিতা জহীরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন রক্ষণশীল। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করার সময় একজন মেম শিক্ষয়িত্রীর কাছে তিনি কয়েক দিন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। বড় ভাই-বোনদের সমর্থন ও সহায়তায় তিনি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাই ভালোভাবে আয়ত্ত করেন।
১৮৯৮ সালে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তদুপরি সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন। তার সাহচর্যে এসেই বেগম রোকেয়ার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়। উদার ও মুক্তমনের অধিকারী স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় বেগম রোকেয়া দেশি-বিদেশি লেখকদের রচনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হন এবং ক্রমশ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। তার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাতও ঘটে স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তবে বেগম রোকেয়ার বিবাহিত জীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯০৯ সালের ৩ মে সাখাওয়াৎ হোসেন মারা যান।
স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর স্বামীর প্রদত্ত অর্থে পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগলপুরে সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল স্থাপন করেন। ১৯১১ সালের ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩ নম্বর ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে তিনি নবপর্যায়ে সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। রোকেয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে এই স্কুল মধ্য ইংরেজি গার্লস স্কুলে এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়। সাহিত্যিক হিসেবে তৎকালীন যুগের প্রেক্ষাপটে বেগম রোকেয়া ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে নবনূর পত্রিকায়।
উল্লেখযোগ্য রচনা : মতিচূর, পদ্মরাগ অবরোধবাসিনী প্রভৃতি। এ ছাড়া আছে অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটোগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ। বেগম রোকেয়া নিজেই বাংলায় অনুবাদ করেন সুলতানার স্বপ্ন নামে। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তিনি মারা যান।
এদিকে, বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন।