• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ভোটের সময়

গাইবান্ধায় বিদ্রোহে নড়বড়ে আওয়ামী লীগ, সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে জাপা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

গাইবান্ধায় বিদ্রোহে নড়বড়ে আওয়ামী লীগ, সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে জাপা

ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

কৃষিনির্ভর জেলা গাইবান্ধা। ২ হাজার ১১৪ বর্গকিলোমিটারের আয়তনের এ জেলার উত্তরে তিস্তা নদী ও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলা; পশ্চিমে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা; দক্ষিণে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলা এবং পূর্ব পাশে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদ। জেলার নির্বাচনী আসন ৫টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪টি এবং জাতীয় পার্টি ১টি আসনে জয়লাভ করে।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে গাইবান্ধা জেলা। গত নির্বাচনে ৪টি আসন পেলেও এবার একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আসন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে ক্ষমতাসীনদের। তারপরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় তারা।

বিএনপিতে বিদ্রোহী না থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে তারা। সুষ্ঠু ভোট হলে সব কটি আসনই দখলে নিতে পারবে বলে মনে করে তারা।

উত্তরাঞ্চল জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে আর সে অবস্থা নেই। তার পরও জেলার পাঁচটি আসনে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি ভোটের মেরুকরণ বদলে দিতে সক্ষম বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দল দুটির মনোনয়ন ও সমর্থনপ্রত্যাশীরাও ভোটারদের মন জয় করতে উপজেলা থেকে গ্রামে জনসংযোগ চালাচ্ছেন।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ)
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-১ আসন গঠিত। এটি সংসদীয় আসন-২৯। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন।

২০১৭ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফরুজা বারীকে পরাজিত করে জয়ী হন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এর পর ২০১৮ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। জামায়াত-অধ্যুষিত এ আসনটি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ উদ্ধার করায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার দলীয় প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াতের ভোটব্যাংক ও বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের নিয়ে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে গোপনে কাজ করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান। বিএনপির কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এখানে থাকলেও নেই এখন পর্যন্ত দলের তেমন তৎপরতা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বোন আফরুজা বারী, যিনি বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আবার প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবুও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মোহসীন সরদার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাফিজুর রহমান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার, ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা আব্দুল আজিজ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আ. কাদের খান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মন্জুরুল ইসলাম লিটন নির্বাচিত হন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম নিহত হলে ২০১৭ সালে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা নির্বাচিত হন। পরে সড়ক দুঘর্টনায় তার মৃত্যু হলে আবারও উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা ও উপজেলা জাপা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

গাইবান্ধা-২ (সদর)
১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-২ (সদর) গঠিত। সংসদীয় আসন-৩০।  এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮৮ জন।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কাছে হারানো গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনটি এবার নিজেদের কবজায় নিতে মরিয়া জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন দৌড়ের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে ছুটছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের কাছে নিজের ইমেজ তুলে ধরতে পালন করছেন সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি। এ আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুর রশিদ সরকার, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা গিনি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর দুবার আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন: বর্তমান সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মণ্ডল, গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ্ আব্দুল হামিদের নাতি শাহ্ সারোয়ার কবীর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর জামান রিংকু।

নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টিটুল, পৌর বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল আরজু।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কারাগারে গেলেও ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুর রশিদ সরকার নির্বাচিত হন। সাবেক এ সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ সরকার ও সদস্যসচিব সরোয়ার হোসেন শাহীন এবার দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এবারও জোটগত নির্বাচন হলে এ আসনটি জাতীয় পার্টি দাবি করবে বলে জানান নেতারা। অন্য দলগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সভাপতি মিহির ঘোষ মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী)
পলাশবাড়ী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও সাদুল্যাপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-৩ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ২৭৫ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন।

জাতীয় পার্টির পুরানো ঘাঁটি হলেও বর্তমানে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। যদিও দলটিতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী ও সাংগঠনিক গ্রুপিং। সেটা কাজে লাগিয়ে আবারও আসনটি উদ্ধারের চেষ্টা করবে জাপা। মহাজোটে থাকায় আসনটি তাদের বাইরে চলে গেছে দাবি করে এবার নিজেদের প্রার্থী দিয়ে আসন উদ্ধার করবে বলে জানান তারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল থেকে এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন: বর্তমান সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদুল্যাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খান বিপ্লব, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সরকার লিপন ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা (অব.) মেজর মফিজুল হক সরকার এবং মাজেদুর রহমান দুলু।

নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির প্রার্থিতা চাইবেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, সাবেক পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আবুল কাশেম মো. নজরুল ইসলাম লেবু।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রয়াত সংসদ সদস্য ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি নেতা মমতাজ উদ্দিন। জাসদের প্রার্থিতা চাইবেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খুদি।

২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নাশকতার কারণে গাইবান্ধা-৩ আসন সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়। ফলে ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও ১২০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি ভোটকেন্দ্রে আগুনসহ ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে পরবর্তী সময়ে ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার লক্ষাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ডা. ইউনুস আলী জয়লাভ করেন। অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হলে ২০২০ সালের উপনির্বাচনে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

এর আগে এরশাদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ)
জেলার সবচেয়ে বড় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৪ আসন। এটি সংসদীয় আসন-৩২। ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ১৯০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ১০০ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮ জন।

গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী নবম সংসদ নির্বাচনে এবং অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ (স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। রংপুর চিনিকলের বাগদা ফার্মের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা মামলায় বিতর্কিত হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত হন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।

মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। মনোনয়ন পেতে নিয়মিত করছেন সাংগঠনিক কার্যক্রম।

তবে  এলাকার বাইরে ঢাকায় থাকায় তেমন সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেই বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর। দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও জনসাধারণের সঙ্গে মিশে চলায় হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ প্রধান ও উপজেলা আওয়ালী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস আলী বাদু ও আবুল কালাম আজাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকারও মনোয়নপ্রত্যাশী।

আসনটিতে বিএনপির উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মোত্তালেব আকন্দ বিএনপিকে গোবিন্দগঞ্জ আসনে শক্ত গণভিত্তি দেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভালো ফল অর্জন করে। তবে এ আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ভোটে অংশ নিলে আব্দুল মোত্তালেব আকন্দের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন থেকে শুরু করে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।

এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ কাজী মো. মশিউর রহমান, জামায়াতের সাবেক জেলা আমির মো.আব্দুর রহিম সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি আব্দুল মতিন মোল্লা ও সিপিবির উপজেলা সভাপতি অশোক আগারওয়াল ও সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন।

জানা যায়, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মোত্তালিব আকন্দ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) আবুল কালাম আজাদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এ আসনে নির্বাচিত হন।

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি ও সাঘাটা)
এটি সংসদীয় আসন-৩৩। জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৩৫ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন।

বছরের শুরুতে ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচিত হওয়ার পর স্বল্প সময়ে এলাকার রাস্তা, নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করায় জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

গাইবান্ধা-৫ আসন জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত।  দীর্ঘদিন নিজেদের দখলে থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি হারায় জাতীয় পার্টি। তাই আবারও আসনটি দখলে নিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে যোগাযোগ শুরু করেছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন ও জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জুকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন স্থানীয়রা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ ও যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আতাউর রহমান আতা।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়ন দৌড়ে থাকবেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার, জেলা বিএনপির সদস্য সোহাগ খান। সিপিবির প্রার্থিতা চাইবেন সাঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ্বর বর্মণ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর প্রার্থী হিসেবে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জানা যায়, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, ২০০১ সালের নির্বাচনে জাপার বেগম রওশন এরশাদ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আবারও অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হলে ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ