• ঢাকা শনিবার
    ০৭ জুন, ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

করিডর হলো ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প’: ড. ইউনূস

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম

করিডর হলো ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প’: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার খবরকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ ও ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার’ গল্প হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ‍মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণা তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চে ঢাকা সফরকালে রাখাইনের মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।

ইউনূস বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প।

“যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম। আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচারের পরেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হবো না। এই জটিল সমস্যা সমাধানে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।”

‌মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের দেশে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর সময়কালে, যখন রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল।

“সেখানে চলমান সংঘাত ও মানবিক পরিস্থিতির কারণে এখনো অনেকে আসতে চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করতে এবং যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম, তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে প্রায় মৃত অবস্থায় পেয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে নিয়ে আসতে পেরেছি।

“আমি গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আপনারা জেনে খুশি হবেন, জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে একমত হয়েছে এবং তারা একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।”

ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আমরা আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করতে পেরেছি। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব এনতোনিও গুতেরেজ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান।

“প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরেকটি বড় অগ্রগতি হচ্ছে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক প্রত্যাবাসনযোগ্য রোহিঙ্গাদের সর্বপ্রথম তালিকার ঘোষণা। গত এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে আলোচনার সময় মিয়ানমার সরকার প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।”

মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঢাকার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যত দেশেই সফর করেছি, সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

সেদিন তিনি বলেন, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিয়ানমার সরকার- সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি।

“তাকে আমরা বলেছি, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা, যে সংকট, সেটা মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।”

তার ওই বক্তব্যের প্রায় তিন সপ্তাহ পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।

তার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলে রাজনৈতিক দলগুলো।

মানিবক করিডর নিয়ে বক্তব্য আসে সেনা সদর থেকেও। বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।

করিডর নিয়ে সমালোচনা তীব্র হতে থাকলে গত ২১ মে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

সেদিন তিনি বলেন, আমি জানি, মিয়ানমারে জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের একটা করিডোর দেওয়ার যে গুজবটা উঠেছে, আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারো কোনো কথা হয় নাই। এবং তাদের সঙ্গে কথা হবে না।

রাজনীতি সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ