ক্রীড়া ডেস্ক
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টোকিও অলিম্পিক আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন রোমান সানা। তুমুল লড়াইয়ে হার মানেন দেশসেরা এই তীরন্দাজ। তবে টিকে ছিলেন দিয়া সিদ্দিকী। নারী রিকার্ভ এককে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে তিনিও হেরে বিদায় নিয়েছেন।
অলিম্পিক আরচ্যারির নারী রিকার্ভ এককের নকআউট পর্বে টাইব্রেকারে বেলারুশের জিওমিনস্কায়া কারিনার কাছে হার মানেন দিয়া। শুট অফে গড়ানো ম্যাচে ৬-৫ সেট পয়েন্টে হেরে নিলেন বিদায়।
১৭ বছর বয়সী দিয়া সব দিক দিয়ে কারিনার চেয়ে বেশ পিছিয়েই ছিলেন। নারী রিকার্ভ এককের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে কারিনার অবস্থান ৩১, আর দিয়ার? ১৫৫! ২৬ বছর বয়সী কারিনার অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও বেশ সমৃদ্ধ। দুই বছর আগে ইউরোপিয়ান গেমসে জিতিয়েছিলেন দলগত ইভেন্টের রুপা। আর দিয়ার অর্জন একটাই, কিছুদিন আগে বিশ্বকাপে রোমান সানার সঙ্গে মিলে জিতেছিলেন রুপা।
ম্যাচের আগে কোচ ফ্রেডরিক জানিয়েছিলেন, র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও দিয়া চমকে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। সে কথাটাই যেন ফলে গেল। দিয়া চমকে দিলেন প্রতিপক্ষ কারিনাকে, জিতে নিলেন প্রথম সেট। তাতে প্রতিপক্ষের পা হড়কানোরও একটা 'অবদান' আছে বৈকি! প্রথম তিরটায় কারিনা তুলেছিলেন ৪। পরের দুই তিরে ৯ তুলেও তাতে লাভ হয়নি। প্রথম সেটের তিন তির থেকে দিয়া তুললেন ৬, ৯, আর ৮, তাতেই প্রথম সেট থেকে দুটো পয়েন্ট চলে যায় বাংলাদেশি এই আরচ্যারের ঝুলিতে।
তবে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১২৪ ধাপ এগিয়ে থাকা কারিনা ম্যাচে ফিরতে সময় নেননি। পরের সেটেই সামলে নিলেন। ৯, ৮, আর ৯ তুলে মোট স্কোর করলেন ২৬, জবাবে ৯, ৭, আর ৯ তুলে দিয়া তুলতে পারলেন ২৫। ফলে কারিনা জিতে নেন সেটটি, আর ম্যাচে ফেরে ২-২ সমতা।
পরের সেটে কারিনা তুললেন ৯, ৮, আর ৮, জবাবে প্রথম তিরে ৭ তুললেও পরের দুই তিরে দুটো নয় তুলে নেন দিয়া। ফলে এ সেটেও ভাঙেনি সমতা। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩।
চতুর্থ সেটের প্রথম তিরে দিয়া আঘাত হানলেন একদম 'বুলস আই'য়ে। ম্যাচ দেখল তার প্রথম ১০। তবে পরের দুই তির থেকে তার ঝুলিতে গেল কেবল ১৫। এর জবাবে তিন তির থেকে কারিনা তুললেন ২৭। দিয়া পিছিয়ে পড়েন ৫-৩ সেট পয়েন্টে।
শেষ সেটের শুরুর তিরে আবারও দিয়ার 'বুলস আই', দশে দশ। এবার আর পা হড়কালেন না আগের সেটের মতো, পরের দুই তির থেকে তুলে নিলেন ১৭। জবাবে ৮, ৯, আর ৮ তুলে কারিনা তুলতে পারলেন ২৫। তাতেই সেটটা হয়ে যায় নীলফামারীর এই তরুণীর।
নির্ধারিত পাঁচ সেট শেষেও ম্যাচে ৫-৫ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আগের দুই সেটের শুরুর মতো হলে হয়তো খেলাটা টিকে থাকত আরও কিছুক্ষণ। কিন্তু শেষমেশ তা আর হয়নি। ফুটবলের টাইব্রেকার শেষে সাডেন ডেথের মতো হয় আরচ্যারির টাইব্রেকার, যার নাম 'শুট অফ'। একবার পা হড়কালেই শেষ, পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই আর। সে শুটে কারিনার ১০-এর জবাবে দিয়া তুলতে পারেন ৯। স্বপ্নযাত্রার ইতি ঘটে তাতেই।
এতো কাছে এসে হারের যন্ত্রণা আছে বটে। কিন্তু হারের আগে যে লড়াইটা হলো, তা আভাস দিচ্ছে ভবিষ্যতে দারুণ কিছুরই।
জেডআই/সবুজ/নির্জন
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন