• ঢাকা শনিবার
    ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ বাড়াতে ডলার ধার করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

রিজার্ভ বাড়াতে ডলার ধার করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার সাময়িকভাবে ধার (সোয়াপ) করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে সুদ দেওয়া হবে এবং ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে পারবে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এসব ডলার আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেরত দেবে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কিছুটা সমাধান হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাময়িকভাবে বাড়বে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা সোয়াপ করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের চুক্তি করতে হবে। এরপর থেকে এ পদ্ধতি কার্যকর হবে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার আদান-প্রদানের কথা বলেছিল। এটি এখন চালু করতে যাচ্ছে। তবে সরাসরি এই পদ্ধতি চালু থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাড়াতে এখনো মাঝে মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই পদ্ধতি আগে থেকেই চালু রয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চালু হবে। বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতি চালু আছে।

সার্কুলারে বলা হয়, এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলারের হাতবদল বা সোয়াপ পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এর আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে যে অতিরিক্ত ডলার থাকবে সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সাময়িকভাবে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার ৭ দিন থেকে ৯০ দিন মেয়াদে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে কোনো ঊর্ধ্ব সীমা নেই।

এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সুদ দেওয়া হবে মার্কিন মুদ্রাবাজারে প্রচলিত সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) ও স্থানীয় বাজারে চালু থাকা ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার চুক্তি বা রেপো সুদ হারের মধ্যকার ব্যবধানের হারে। বর্তমানে তিন মাস মেয়াদি ডলার বন্ডের সুদ হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। রেপো সুদ হার ৮ শতাংশ। এ দুইয়ের মধ্যকার ব্যবধান হচ্ছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার ধার দিলে ওই হারেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুদ পাবে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বাড়তি পাবে ডলারের বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা। ওই দিনের বিনিময় হারের হিসাবে টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করবে। এসব অর্থ দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের তারল্যের বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারবে।

নির্ধারিত সময় শেষে ব্যাংকগুলো এসব ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফেরত পাবে। ওই সময়ে নির্ধারিত হারে সুদ পাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে। তবে ডলারের দাম ওঠানামা করলেও ফেরত আনার সময় ব্যাংকগুলো বাড়তি দর পাবে না। তারা আগের দরেই ডলার ফেরত পাবে। বাড়তি দরের সমন্বয় হবে সুদ হারের মাধ্যমে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে যেসব অতিরিক্ত ডলার থাকে সেগুলো এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করে। চাহিদা অনুযায়ী এগুলো আবার ফেরত নেয়। একই সঙ্গে আগাম কিছু বিক্রিও করে। এই পদ্ধতি চালু হলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের বিনিময় কমে যাবে।

এতে বাজারে ডলারের সংকট আরও বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হলে সাময়িকভাবে হয়তো রিজার্ভ বাড়বে, কিন্তু ফেরত দেওয়ার সময় আবার রিজার্ভ কমে যাবে। এতে রিজার্ভের ওঠানামা বেড়ে যাবে। ফলে রিজার্ভ অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো মাঝে মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। এতে রিজার্ভ স্থায়ীভাবে বাড়ছে না।

অনেকেই মনে করেন, বাজারের ডলারের প্রবাহ বেশি থাকলে এই পদ্ধতি কার্যকর হতো এবং সব পক্ষই এতে সুফল পেত। কিন্তু ডলারের সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার চাইলে সব ব্যাংকই তাদের ধার দেবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকে দিতে চাইবে না। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ কমে যাবে।

এদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে ব্যাংকের স্থানীয় ইউনিট থেকে অফশোর ইউনিটে ডলার স্থানান্তর বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে যেসব ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত ডলার রয়েছে তারা সেগুলো স্থানান্তর করতে পারছে না। তবে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারছে ।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ২ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারে নেমেছে। রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিলেও এর লক্ষ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ