প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:৫৩ পিএম
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। প্রতারণার মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাতিলের এই ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ।
এর আগে জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী নির্বাচনে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানান চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও এবারের চেয়ারম্যান প্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী। যাচাই-বাছাইকালে তার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী চাইলে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আগামী তিনদিনের মধ্যে তিনি আপিল করতে পারবেন।’
মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাঠ সরবরাহের যৌথ ব্যবসার প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির। এ মামলায় বিচারিক আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিলেও ২০০৮ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খুলনা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আপিল শুনানি শেষে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর বিচারক পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
পরে ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করে দণ্ডাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রিট পিটিশনটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে বিচারপতি মাইনুল হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালত দণ্ডাদেশের স্থগিতাদেশ বাতিল করে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর ইউসুফ গাজী উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ২০১৭ সালে একটি পিটিশন দায়ের করলেও আদালত দণ্ডাদেশ স্থগিত না করে ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু পিটিশন করার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তা তৎক্ষণাৎ খারিজ হবে। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে লিভ টু আপিল করেন।
রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগকারী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, যেহেতু আসামি আপিল আদালতের রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণ না করে পলাতক থাকেন এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে সাজা পরোয়ানা জারি করতে দেননি। তাই তিনি বর্তমানে আইনের চোখে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে চিহ্নিত।
অভিযোগে বলা হয়, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ৬ (২) ঘ ধারা অনুযায়ী ‘নৈতিক লঙ্গনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধের কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে অনূন্য দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তবে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার যোগ্য হবেন না।’এ অবস্থায় তার নির্বাচনী মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য এবং তিনি নির্বাচন করার অযোগ্য।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ গাজী গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্তু আজ রিটার্নিং অফিসার আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে আমি আপিল করবো এবং আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।’
এআরআই