
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে চলমান সমাবেশে এই ঘোষণা দেনদলটির নেতারা।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে বায়তুল মোকাররমের সামনে এ সমাবেশ শুরু হয়। এতে এনসিপির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এনসিপির নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে।
সমাবেশে বক্তব্যে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেছেন, গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জাজনক। আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি।
আওয়ামী লীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না, তা জুলাই প্রজন্ম জানতে চায়- উল্লেখ করে তারিকুল আরও বলেন, অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তারা কোনো আমলাতন্ত্রিক জটিলতা দেখতে চান না। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচনে যেতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় করেছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে হবে। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার ছাড়া আবারও একটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেছেন, আমাদেহ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। দেশের মানুষকে তারা ভোট দিতে দেয়নি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য অবশ্যই দুর্নীতিপরায়ণ, খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দিল্লির ‘প্রেসক্রিপশনে’ বাংলাদেশ আর চলবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যূনতম টালবাহানা করবেন না। মৌলিক সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়।
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসীন রিয়াজ বলেন, আগামীর রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে ছুড়ে ফেলার রাজনীতি। যে সাংবাদিকেরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার রাজনীতি।
এনসিপির সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। এটাই হবে এই সরকারের অন্যতম সংস্কার।
দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে কি চলবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এনসিপির সংগঠক মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ ৫ আগস্টই দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই যোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে। সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না।
দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। সংস্কারের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
কয়েকটি দল এনসিপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ অবলেন, এনসিপির বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা শেষ হবে। এনসিপির একজন কর্মী জীবিত থাকতে বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসানও সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের বুকে ৭০টা গুলি করা হয়েছিল। একটা মানুষকে মারতে কত গুলি করতে হয়? হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো স্থান হবে না।
পৌনে পাঁচটার দিকে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঞ্চে আছেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। নেতাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।