• ঢাকা রবিবার
    ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোরে বের হলেন একসঙ্গে, বিকেলে ফিরলেন ভাইয়ের লাশ নিয়ে

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ০২:৩৩ এএম

ভোরে বের হলেন একসঙ্গে, বিকেলে ফিরলেন ভাইয়ের লাশ নিয়ে

খুলনা ব্যুরো

দুই ভাই ভোরে একসঙ্গে বের হন বাসা থেকে। খুলনা বাসস্ট্যান্ডে এসে ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে উঠেন তারা। গোপালগঞ্জ এলে ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান বিংসাম বাস থেকে নেমে পড়েন। পরে সেখান থেকে ট্রেনে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। আর বড় ভাই আশফাকুজ্জামান লিংকন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে থেকে যান বাসে।

কিছুক্ষণ পর ইশরাকুজ্জামান বিংসাম জানতে পারেন, ইমাদ পরিবহনের ওই বাসটি মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় সড়কের রেলিং ভেঙ্গে খাদে পড়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গেছেন। একপর্যায়ে নিহতের তালিকায় বড় ভাই আশফাকুজ্জামান লিংকনের নাম দেখতে পান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বড় ভাইয়ের লাশ নিয়ে বিকেলে খুলনায় ফেরেন।

নিহত আশফাকুজ্জামান লিংকন খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া আমতলা এলাকার শাহাজাহান মোল্লার ছেলে ও পেশায় একজন ঠিকাদার ছিলেন। ঢাকা ও খুলনায় তার বেশ কিছু কাজ চলছে।

অপরদিকে, ইশরাকুজ্জামান বিংসাম রাজবাড়ীতে বেসরকারি একটি ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। গত বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া আমতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে আসেন তারা।

ইশরাকুজ্জামান বিংসাম বলেন, ‘দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির প্রথম দিকের এক সিট পরে আমি ও পরের আসনে লিংকন বসেছিল। শুরু থেকেই বাসটির গতি খুব বেশি ছিল। প্রথমদিকে চালককে দ্রুত চালানোর জন্য নিষেধও করা হয়। কিন্তু তিনি কথার কর্ণপাত করেননি। ভোর ৬টার দিকে বাসটি গোপালগঞ্জ পৌঁছায়। সেখান নামার পূর্বে ভাই বলেছিল, ভালো থাকিস। এরপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই ভাই একসঙ্গে যাত্রা করলাম। এখন ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। দুপুরে মাদারীপুর থেকে লাশ নিয়ে যাত্রা করে বিকেলে খুলনা পৌঁছাই। এশার নামাজের পর স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। ব্যক্তিগত জীবনে লিংকন অবিবাহিত ছিলেন।’

ইমাদ পরিবহনের খুলনা জোনের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘ভোরে খুলনার ফুলতলা থেকে একজন যাত্রী নিয়ে বাসটি রয়্যাল মোড়ের কাউন্টারের সামনে আসে। সেখান থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যায়। ওই যায়গা থেকে মোট ১৭ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও গোপালগঞ্জ থেকে আরও কিছু যাত্রী উঠে।’

এদিকে, মাদারীপুরের শিবচরের দুর্ঘটনায় খুলনার মোট ৪ জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধু খাঁর ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা মহাদেব কুমার সাধু খাঁ, খুলনা মহানগরীর শেখ মোহম্মদ আলীর ছেলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, চিত্তরঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন ঘোষ ও শাহাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন।

আর্কাইভ