
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি আমরা নিজেরাই দলাদলি করি, নিজেরাই যদি মেধাকে বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতিকে গুরুত্ব দেই, তাহলে যে পরিবর্তন কিংবা নতুন দেশ গঠনের প্রত্যয়ের কথা বলছি, তা সম্ভব হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে আপনারা (শিক্ষক) অবশ্যই রাজনীতি করবেন, কিন্তু সেটা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট না করে!
আজ রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সিনেট ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, যেভাবে আমাদের শিক্ষাদানের কথা ছিল, সেই জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছি। আমাদের মূল দায়িত্ব শিক্ষাদান করা। আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে, কিন্তু রাজনীতির যে নেতিবাচক দিকগুলো আছে সেগুলো আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে পারি না। এখানে আমরা মেধার চর্চা, বিকাশ ঘটাতে এবং ভালো মানবসম্পদ তৈরির কাজে এসেছি।
অধ্যাপক রফিকুল আবরার বলেন, জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিতে দেখেছি। এর পেছনে একটি স্পৃহা ছিল। তারা স্বৈরাচারকে হঁটাতে পেরেছে। তবে, এরপর পরিবর্তনের যেই ছোঁয়া আসার কথা ছিল, যেই স্বপ্ন আমরা লালন করেছিলাম, তা হয়তো এখনও অনেকটাই সফলতার মুখ দেখেনি! ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সেসময় শুধু ইতিহাস বিকৃতি করেনি, তাদের পোষা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও সেটির পরিচর্যা করেছিল। জুলাই-আগস্ট আমাদের আবারও নতুন একটি ইতিহাস এনেছে। আমাদের কোনোভাবেই এই ইতিহাস বিকৃত হতে দেওয়া যাবে না।
নতুন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাতে এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জ। উচ্চতর দক্ষতা এবং ভালো মানের শিক্ষা ছাড়া এই রাষ্ট্র পুণর্গঠন করা সম্ভব হবে না। ভালো মানের শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব শিক্ষকদের। এছাড়া অভিভাবদেরও ভূমিকা এখানে রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব হবে তাদের মানসম্পন্ন শিক্ষার অধিকার আদায় করে নেওয়া।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তোমাদের বড় এই অর্জনে শ্রমজীবী জনগণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল। যার কারণ তোমরা এটা করতে পেরেছো। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী তোমাদের সাহায্য করেছে। তোমরা অবশ্যই মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রাখবে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কী, কীভাবে কাজ করে, সেটি জানা প্রত্যেকের জন্য জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি অন্তর্দহ অনুভব থাকতে হবে। একটা অস্থিরতা, যা নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করবে, এটাই কি যথেষ্ট? গবেষণা ও পাঠদানে আরও মানোন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কিছু অর্জনের পাশাপাশি অনেক ব্যর্থতার দৃষ্টান্তও রয়েছে। এসব ব্যর্থতার মধ্যে অন্যতম হলো অপরাজনীতির চর্চা, যা এখনও চলছে। এই প্রবণতা যদি সময়মতো রোধ করা না যায়, তাহলে আবারও পুরোনো সমস্যার মধ্যেই ফিরে যেতে হবে।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আজাহারুল ইসলাম খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, অতীত ও বর্তমানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া অন্যদের বক্তব্য দেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান।
এসময় ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।