• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যু: শিক্ষার্থীদের মৌন অবস্থান কর্মসূচি

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম

ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যু: শিক্ষার্থীদের মৌন অবস্থান কর্মসূচি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগ তুলে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বজলুর রহমান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সাজ্জাদ সাব্বির, ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের  জারিন তাসমিন পুষ্পসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ক্যাম্পাসে লাশ কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, প্রশাসন স্বর্গে’, ‘সাজিদ তো কবরে, এরপর কী আপনি আমি?’, ‘লন্ডন ট্যুর কেমন ছিল স্যার?’, ‘তোমরা আবেগী হয়ো না’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না’, ‘মাছের বেলাই সবাই সই, লাশ পড়লে ভিসি কোই’, ‘সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট চাই’— ইত্যাদি প্লেকার্ড দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, “১৮ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রশাসনকে রাখা হয়েছে, অন্যদিকে এটা যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেটা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে আমাদের মনে হয় এটা কোন কাকতালীয় ঘটনা না, এটা সম্পূর্ণ হত্যাকাণ্ড, ইতোমধ্যে তা সবার কাছে পরিষ্কার। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রশাসন ছয় দিন সময় নিয়েও তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই বিষয়টা আমাদের প্রচণ্ড শঙ্কিত করছে, আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে— আদৌ কি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপদ?”

তারা আরও বলেন, “সাজিদ হত্যার বিষয়টা যদি একবার ধামাচাপা দেওয়া হয়ে যায়, তবে যারা হত্যাকারী, এর পেছনে লুকিয়ে আছে তারা সুযোগ পেয়ে যাবে, সাহস পেয়ে যাবে। হত্যাকারী ভাবতেই পারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্ডার করা খুবই সহজ, কারণ হত্যা হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন তদন্তও হয় না, কোন বিচারও হয় না। এতে করে অনেক পক্ষ থাকতে পারে, যারা এই ধরনের হত্যাকাণ্ড করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানমাল নিয়ে খেলা করতে প্রস্তুত থাকে— সেই মহলগুলো সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।”

আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখিত হচ্ছি বারবার, প্রশাসন কোন পদক্ষেপ আমলে নিচ্ছে না। আমাদের আন্দোলন, সংগ্রামে প্রশাসনের কানে পানি যাচ্ছে না। উপাচার্য স্যার লন্ডনে সফরে গিয়েছেন, ভিডিও বার্তায় কোন সান্ত্বনা দিতে পারতেন— কিন্তু তিনি তা করেননি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে এসব প্রত্যাশা করি না। উপাচার্য স্যারকে ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে বসানো হয়েছে। তিনি এখানে আসার পর তাঁর ক্যাম্পাসেও এমন হলো। এটা আমরা প্রত্যাশা করিনি।”

তারা বলেন, “আমাদের এখানে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। যে ক্যাম্পাসে আমরা নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করব, পড়াশোনা করব, কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসগুলোর সাথে নিজেদেরকে জড়িত করব এবং আমরা নিজেদেরকে দক্ষ, সৎ, যোগ্য, আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিরাপদ পরিবেশ চাই। এই নিরাপত্তা, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্যই আজকে আমাদের অবস্থান।”

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহ আমাদের ভাই, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি আমাদের। এর থেকে বেশি আমরা আর কিছু চাই না। আমরা এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কিংবা একাডেমিক কোনো কাজকে বাধাগ্রস্ত করা কিংবা ব্যাহত করা আমাদের মোটেও উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারও পদত্যাগ চাই না। আমরা কাউকে পদ থেকে সরাতে চাই না। আমরা চাই যারা যেখানে আছেন, তাদেরকে আমরাই ছাত্র জনতা সেখানে বসিয়েছি।

আমরা শিক্ষার্থীরাই তাদেরকে সেখানে দিয়েছি। ’২৪-এর আন্দোলনের পর আমরা আমাদের রক্তের বিনিময়ে তাদেরকে সে জায়গায় বসিয়েছি, যেন তারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন, আমাদেরকে একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস, সুষ্ঠু শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ উপহার দিতে পারেন। এজন্যই তাদেরকে আমরা সেই পদে বসিয়েছি। আমরা তাদের কাছ থেকে এ প্রত্যাশা করছি যে— তারা আমাদেরকে নিরাপদ ক্যাম্পাস প্রদান করবেন এবং সাজিদ হত্যার এই বিষয়টা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ পরিমাণ তৎপর হবেন।”

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ