প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম
সবার অজান্তেই
লাশ হয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। পর্দার মতো
তার লাশটি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ
থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশটি দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে জানালে তারা এসে লাশটি
উদ্ধার করে এবং লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত করে।
শিমুর মৃত্যুর
খবরটি মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সবাই তার খোঁজ নিতে
থাকে। সামাজিক মাধ্যমে তার বিভিন্ন চরিত্র উল্লেখ করে ভক্তরা দুঃখ প্রকাশের
পাশাপাশি এই হত্যার বিচার চাইতে থাকে। তারপর অভিনেত্রী সাদিয়া মির্জার আইডি থেকে
১১ মিনিটের বেশি সময় ধরে একটি লাইভ প্রকাশ করা হয়। সেখানে সাদিয়া মির্জাকে
শিমুর বাসার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখানো হয়। লাইভের অনেকটা সময় তিনি ইঙ্গিত
দিয়ে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেও অভিনেতা জায়েদ খানের নাম সরাসরি বলতে শোনা
যায়। যেখানে এই হত্যার পেছনে অভিনেতা ও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের হাত থাকতে
পারে বলে সন্দেহ করেন তিনি। তবে এর কিছু সময় পরই জায়েদ খান ঘটনাস্থলে এসে নিজের
অবস্থান এবং শিমু হত্যার সঙ্গে তার নাম জুড়ে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। সে সময়
জায়েদের সঙ্গে শিমুর বড় ভাইকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এরপর সংবাদ সম্মেলন
করে শিমুর পরিবার জায়েদের নামে করা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং আসল খুনি শিমুর স্বামী
বলে দাবি করেন।
এরপর রাতেই এ
ঘটনায় শিমুর স্বামীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরিবার থেকে তাদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আটক হন আসামি সাখাওয়াত আলী নোবেল। এরপর
পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
অভিনেত্রী রাইমা
ইসলাম শিমুকে তার স্বামী হত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড
হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত)
কাজী রমজানুল হক সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘রাইমা ইসলাম শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার
দায় স্বীকার করেছেন। পারিবারিক কলহের জেরেই তিনি এই হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া শিমুর স্বামী
স্বীকার করেছেন যে, গতকাল সকাল ৭টায়
শিমুকে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীর কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের নিচ থেকে গতকাল (সোমবার) দুপুরে শিমুর
মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে অভিনেত্রী শিমুর খুনিকে পালানোর আগেই গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছে তার পরিবার। তাদের দাবি এ হত্যা পরিকল্পিত। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে স্বামীর বন্ধু ফরহাদ হোসেনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত ও বস্তাবন্দি করে লাশ ফেলে দেয়ার ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুর ভাই বাদী হয়ে একটি মামলাও করেছেন। শিমুর বড় ভাই জানিয়েছেন, শিমু ও তার স্বামীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। সেই ঝগড়ার সূত্র ধরেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়েছে।
শিমু ছিলেন রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা। রোববার (১৬ জানুয়ারি) অভিনেত্রী শিমুর অভিভাবকেরা নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কলাবাগান থানায় ।
উল্লেখ্য, এমনিতে শিমু বেশ কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র সূত্রে আলোচনায় ছিলেন না। নতুন কোনো চলচ্চিত্রে তাকে দেখা যায়নি। কোনো খবরের শিরোনামে ছিলেন না প্রয়াত এই অভিনেত্রী। করোনার মধ্যে হঠাৎ এই চিত্রনায়িকাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য পদ হারানো ১৮৪ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে এফডিসির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন অন্য সহকর্মীসহ।
মাহি/এম. জামান