• ঢাকা রবিবার
    ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

হেঁটেই চলাচল করেন ৮৬ বছরের মওলা বকস্

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

হেঁটেই চলাচল করেন ৮৬ বছরের মওলা বকস্

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

মওলা বকস্, বয়স ৮৬। ছোটবেলা থেকেই হেঁটে মাইলের পর মাইল চলা তার অভ্যাস। এই অভ্যাসের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকবাহক। কুষ্টিয়া জেলার বিএলএফ প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর চিঠিপত্র নিয়ে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছেন।

সেই থেকে শুরু করে আজ অবদি তিনি সব জায়গাতে হেঁটেই চলাচল করেন। তিনি ৭০ বছর ধরে এমনি করে হেঁটেছেন শত শত মাইল। ৮৬ বছর বয়সেও তিনি নিরন্তর পায়ে হেঁটেই সারেন তার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম।

মওলা বকস্ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, কিন্তু নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সর্বশেষ যাচাই-বাচাইয়ে তিনি ভাইভা বোর্ড ফেস করে এখন অপেক্ষায় আছেন। স্বপ্ন দেখছেন জীবনের শেষ বেলায় নাম উঠবে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়।

মওলা বকসের হেঁটে চলার বিষয়টি এ প্রজন্মের অনেকের কাছেই রূপকথার গল্পের মতো আজব মনে হলেও মোটেই গুজব নয়।

তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ২ মেয়ে ও ২ ছেলের জনক। অশিতিপর মওলা বকসের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের মল্লিক পাড়ায়। পিতা মৃত জেহের আলী। মওলা বকস্ যখন যুবক বয়সে দুরন্ত গতিতে হেঁটে চলতেন তখন এলাকার মানুষ তাকে ঝড়ের পাখি, তুফান মেইলসহ বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করতেন। বর্তমানে ৮৬ বছরের মওলা বকস্ এ যুগের যে কোনো তরুণের সঙ্গে হাঁটা প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাঁটতে চান।

হাঁটার কারণ জানতে চাইলে মওলা বকস্ জানান, ছোটবেলায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় হেঁটেই চলতে হতো মানুষকে। হাঁটার শুরু সেখান থেকেই।

তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মারফত আলীর অধীনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মারফত আলীর কৌশলগত অনেক গোপন সংবাদ মওলা বকসের মাধ্যমে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছানো হতো। মারফত আলীর গোপন চিঠি নিয়ে মওলা বকস্ সকাল ৭-৮টার মধ্যে নিজ গ্রাম আবুরী থেকে হেঁটে যেতেন মেহেরপুর। মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা, শিয়ালমারী হাট, ঝাঝারী বিল ও আব্দুলপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে আবার ওইদিন বিকাল ৩-৪টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসতেন।

এতো রাস্তা কিভাবে যেতেন এবং আবার ওইদিনই কিভাবে বাড়িতে ফিরতেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে মওলা বকস্ জানান, হাঁটা শুরু হলে তিনি একটা আধ্যাত্ম শক্তি অনুভব করেন। যার ফলে ক্লান্তিহীনভাবে দ্রুত হাঁটতে পারতেন।

এ ছাড়াও তিনি বাড়ি থেকে প্রাগপুর ও ইশ্বরদী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আবার দিনে দিনেই বাড়ি ফিরতেন। ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে প্রথম যখন পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয় তখন তিনি বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ওই রাস্তার নির্মাণকাজ দেখতে গিয়েছিলেন বলেও জানান।

জেইউ

 

আর্কাইভ