• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

আরও একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে কি ভারত-পাকিস্তান?

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম

আরও একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে কি ভারত-পাকিস্তান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল পাহেলগামে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলা। যেখানে নিহত হন অন্তত ২৬ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন ভারতীয় পর্যটক এবং একজন নেপালি নাগরিক। ভারতীয় সরকার দাবি করেছে, এই হামলাটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট‍‍` (টিআরএফ)’-এর দ্বারা সংগঠিত।

ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই প্রতিবেশী দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় সূচিত হলো এই হামলার মাধ্যমে। ঘটনার পরপরই দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করার কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘এই রক্তপাতের জবাব দেওয়া হবেই। সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেওয়া কোনো দেশকেই আমরা আর সহ্য করবো না।’

এরপরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয় ভারত। কাশ্মীর হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পানি বণ্টন চুক্তি ‘ইনডাস ওয়াটার ট্রিটি’ স্থগিত করে। পাকিস্তান সিন্ধু নদী ও এর শাখা নদীগুলোর পানি ব্যবহার করে থাকে, যেগুলোর উৎস ভারতেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের পানি নীতিতে এই পরিবর্তন, পাকিস্তানের খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করতে পারে।

ইসলামাবাদে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরতে বলেছে দিল্লি। সেইসঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ভারত। যারা এরই মধ্যে ভারতে অবস্থান করছেন তাদেরও চলে যেতে বলা হয়েছে।

ভারত ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সাময়িকভাবে স্থগিত রাখারও ঘোষণা দিয়েছে। 

পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

ভারতের নানা ব্যবস্থার পর চুপ থাকেনি পাকিস্তানও। তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল কঠোর ও প্রতিরোধমূলক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত যদি পানি প্রবাহ বন্ধ বা অন্য দিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে তা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার জবাবে পাকিস্তান জাতীয় শক্তির পূর্ণ পরিসর ব্যবহার করবে।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ছবি: রয়টার্স

এরইমধ্যে পাকিস্তান ভারতীয় বেসামরিক ও বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে থাকা সব দ্বিপাক্ষিক ও বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে।  

এই সংকট আন্তর্জাতিক পরিসরে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘কোনো পরিস্থিতিতেই এই ধরনের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘কাশ্মীরের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। আমেরিকা ভারতের পাশে দাঁড়াবে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছেন, ‘এই নির্মম আক্রমণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা আশা করি, এই আক্রমণ ও চক্রান্ত যারা করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের হাতেই পরমাণু অস্ত্র আছে। ফলে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাঁদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামান্য একটি সীমান্ত সংঘর্ষও বড় ধরনের যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি এবং মানবিক নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এদিকে সর্বদলীয় বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস। ভারতের লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী জানান, বিরোধী দল সরকারকে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই যদি উভয় দেশ রাজনৈতিক কৌশল ও কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করতে না পারে, তাহলে তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা-পরবর্তী পরিস্থিতির থেকেও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে।

২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন

২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন। ছবি: রয়টার্স

২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার যেহেতু নিহত ব্যক্তিরা সাধারণ পর্যটক, তাই রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি আরও সংবেদনশীল। 

এবারের হামলার সময়টা ভূরাজনৈতিক দিক দিয়েও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সে সময়ে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফরে ছিলেন। 

একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘যদি উত্তেজনার পালা শুরু হয়, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আপনি মোদিকে বুঝতে পারবেন না। তিনি কী করবেন তা বলা কঠিন। তিনি খুবই আগ্রাসী মানসিকতার লোক।’

তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল জাজিরা, এপি, নিউজ১৮, টাইমস অব ইন্ডিয়া

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ