
প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন দুইজন। প্রথমে সাগর ও পরে রুনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা। তবে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) অস্পষ্টতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তদন্তের জন্য আরও সময় লাগবে উল্লেখ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আলোচিত এ মামলাটির তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল (পিবিআই প্রধান) বলেন, ‘হাইকোর্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে কি কি কাজ করা হয়েছে। সেগুলোই হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।’
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র্যাবের কাছ থেকে সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। র্যাব ২০১২ সালে মামলাটির দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে এমন নির্দেশ দেয়। এর পর নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি তারা। এখন পর্যন্ত নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।
সম্প্রতি জমা দেওয়া টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগর-রুনি। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারে- এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।
হাইকোর্টে দাখিল করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত। তবে রান্নাঘরের বারান্দা সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।
সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ওই সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন সাগর। আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।