
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
উত্তর-পূর্ব ভারতের ছয়টি রাজ্য যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। টানা ভারী বৃষ্টিপাত, আকস্মিক বন্যা ও ধ্বংসাত্মক ভূমিধসে কেবল গত ৪৮ ঘণ্টাতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন, এমন খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। প্রতিবেদন বলছে, ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও সিকিম।
সর্বাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অরুণাচল প্রদেশে। পশ্চিম কামেং জেলার একটি পাহাড়ি রাস্তায় ভূমিধসের কবলে পড়ে সাতজন যাত্রী বহনকারী একটি গাড়ি গভীর খাদে পড়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হয় সবাইয়ের। আরেকটি ঘটনায় নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে ধসে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যান আরও দুই শ্রমিক।
মেঘালয়ের গারো ও খাসি পাহাড়ে ধস নামার ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪ জনের। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বসতবাড়িগুলো মাটি চাপা পড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
মিজোরামের কমপক্ষে ১০টি জেলায় ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৪ জন। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য খোলা হয়েছে ত্রাণ ও আশ্রয় শিবির।
বন্যা ও ঝড়ো হাওয়ার কবলে লণ্ডভণ্ড আসাম। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ির উপর। অন্তত ১২টি জেলা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সিকিমে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রবল স্রোতের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে জনগণকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের নিম্নাঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
ত্রিপুরায় বৃষ্টির তীব্রতায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকায়। নদী-নালার পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরবর্তী কয়েক দিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়বে, এমনটি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যেকটি রাজ্যে যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়।