• ঢাকা শুক্রবার
    ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্রাণের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম

ত্রাণের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বুধবার গাজার উত্তরে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করা অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে জানান, ইসরায়েলি গুলিতে আরও প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন।

তবে ইসরায়েল বলেছে, এই ঘটনার বিস্তারিত এখনো "পর্যালোচনাধীন"।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, যখন গাজার মানুষ যখন জিকিম ক্রসিং থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ত্রাণের ট্রাক ঘিরে জড়ো হয়েছিল তখন তারা "সতর্কতামূলক গুলি" চালিয়েছিল, তবে তাদের জানা নেই যে ওই গুলিতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা।

গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া এএফপি-কে বলেছেন, ওই ঘটনার পর তার হাসপাতালে ৩৫টি মরদেহ এসেছে।

পরে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, হাসপাতালটি তথ্য মতে, অন্তত ৪৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এদিকে, গাজার রাফাহ এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে বুধবার সকালে ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার হাসপাতাল সূত্র বিবিসি-কে জানিয়েছে।

জিএইচএফ (গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন) বিবিসি-কে জানায়, বুধবার তাদের এদিকে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি।

আইডিএফ বিবিসি-কে বলেছে, তারা "সন্দেহভাজন" একদল মানুষকে হুঁশিয়ারি করেছিল। তাদের মনে হয়েছে এই মানুষরা তাদের সেনাদের জন্য হুমকি হতে পারে। পরে সেনাবাহিনী "সতর্কতামূলক গুলি" চালায়, যা বিতরণ কেন্দ্র থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ছিল।

সেনাবাহিনী আরও জানায়, "প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে নিহতের সংখ্যা নিয়ে যে রিপোর্ট এসেছে, তা আইডিএফ-এর হাতে থাকা তথ্যের সঙ্গে মেলে না।"

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিতে ১৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে, যার মধ্যে ৮৯টি শিশু বলে জানিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এই ঘটনার মধ্যে জাতিসংঘ-সমর্থিত বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় "দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি" এখন বাস্তবে ঘটছে।

যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠাতে কোনো বাধা দিচ্ছে না, যা ইউরোপের কিছু দেশ ও জাতিসংঘ অস্বীকার করেছে।

এই সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজায় যে "ফোঁটায় ফোঁটায় ত্রাণ" ঢুকছে, তা "সমুদ্রের মতো প্রবাহে" পরিণত হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, "খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি ঢেউয়ের মতো প্রবাহিত হতে হবে, কোনো বাধা ছাড়াই। এই দুঃস্বপ্নের শেষ হওয়া দরকার।"

বৃহস্পতিবার, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েল সফর করবেন।

উইটকফের এই সফরের মধ্যেই, কানাডা ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিক করা হবে, কানাডা তৃতীয় জি-সেভেনভুক্ত দেশ যারা এমন ঘোষণা দিয়েছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছের, যার মধ্যে ১৮ হাজার ৫৯২টি শিশু এবং নয় হাজার ৭৮২ জন নারী রয়েছেন।

আর্কাইভ