প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ০৫:৫৭ পিএম
ওমর
ফারুক। নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের সঙ্গে প্রথমে পরিচিত হন। এরপর শুরু
করেন কথাবার্তা। এভাবেই কিছুদিন চলার পর একদিন
হাজির হয়ে যান টার্গেট
নারীর বাসায়। বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে মিষ্টি কথা
বলে টার্গেট নারী ও তার
বাসার লোকজনের মন জয় করার
চেষ্ট করেন। তাদের মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরির চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে টার্গেট নারীকে দেন বিয়ের প্রস্তাব।
যেহেতু আগেই টার্গেট নারীর
পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করেছেন, সেহেতু কেউ অমতও করেন
না। যথারীতি বিয়েও হয়। এরপর শুরু
করেন ব্যবসা বা প্রয়োজনের কথা
বলে টাকা নেয়া। হাতিয়েও
নেন। কিন্তু কিছুদিন সংসারের পরই প্রতারণার বিষয়টি
বুঝতে পারেন ভুক্তভোগী নারীরা।
এভাবেই
ওমর ফারুকের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন অন্তত পাঁচজন নারী। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই বিভিন্ন
অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। প্রতারণার শিকার নারীদের কেউ কেউ প্রতারক
ওমর ফারুকের সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করেছেন। আবার কেউ নীরবে
তার কাছ থেকে দূরে
সরে গেছেন। তবে কেউ প্রতিবাদ
করলে তাকে হুমকি-ধমকি
দেন ফারুক। এমনকি বন্ধুদের দিয়েও ভুক্তভোগী নারীদের ফোন দিয়ে হুমকি
দেওয়ান।
সম্প্রতি
প্রতারণার শিকার একজন নারী দেনমোহর
ও খোরপোষের দাবিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন। এ ছাড়া হুমকি
দেয়ার ঘটনায় ১০৭ ধারায় আদালতে
আরও একটি মামলা করেছেন।
সেই সঙ্গে ভরণপোষণের দাবি করলে হুমকি
দেয়ার অভিযোগে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি
নথিভুক্ত করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ১৯৯৪ সালে এসএসসির শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপে ওমরও যুক্ত ছিল। ওই গ্রুপের মাধ্যমেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে ওমর ফারুকের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে অনলাইনে ও ফোনে বিভিন্ন কথাবার্তা হতো। ওই সময় নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন।
ওমর ভুক্তভোগীকে জানান, মিরপুরে তার পাঞ্জাবিওয়ালা নামক একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এভাবেই চলতে থাকে কর্থাবার্তা। একপর্যায়ে তিনি ভুক্তভোগী নারীর বাসায় যাতায়াত শুরু করেন। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিষ্টিকথা বলে বিশ্বস্ততা তৈরি করেন। এরই মধ্যে ভুক্তভোগীকে দেন বিয়ের প্রস্তাব। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর কিছুদিন সংসার ভালো চলেলেও একপর্যায়ে ব্যবসাসহ নানা অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করেন।
এভাবেই ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত চার লাখ টাকা
হাতিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে ভুক্তভোগী স্বামীর
দেয়া মিরপুরের ঠিকানায় গিয়ে তাকে পাননি।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওমর
ফারুক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না বলে জানিয়ে
বিভিন্ন হুমকি দেন। এ ছাড়া
বন্ধুদের দিয়েও ভুক্তভোগীকে হুমকি দেওয়ান। পরে এ ঘটনায়
তিনি বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ছাড়া দেনমোহর
ও ভরণপোষণের খরচের দাবিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। সেই সঙ্গে হুমকির
বিষয়ে ১০৭ ধারায় আদালতে
আরেকটি মামলা করেন।
ভুক্তভোগী
নারী আরও জানান, তিনি
খোঁজখবর নিয়ে জেনেছেন ওমর
ফারুক আরও অন্তত চারজন
নারীর সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করেছেন। ওমর মূলত ডিভোর্সি
ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীদের টার্গেট করেন। মিষ্টিকথা বলে সম্পর্ক স্থাপন
করেন। তার প্রতারণার বিষয়টি
বুঝতে পেরে কেউ কেউ
ওমর ফারুকের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন।
বনানী
থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরির
তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগীকে আইনি সহায়তা দেয়া
হচ্ছে। অভিযুক্তের ঠিকানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ফোনে যোগাযোগ
করা হলে নম্বর বন্ধ
পাওয়া যাচ্ছে। তিনি পলাতক রয়েছেন।
তাকে খোঁজা হচ্ছে।’
লাইজুল/এম. জামান