প্রকাশিত: মে ১১, ২০২১, ০৪:২৩ পিএম
রাজধানীতে
প্রায় দুই কোটি মানুষের
বসবাস। এই নগরীতে গৃহকর্মীর
কাজ করেন নানা বয়সী
লক্ষাধিক নারী ও পুরুষ।
করোনার কারণে অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট বাড়িতে
ছুটা গৃহকর্মীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যার কারণে এই
কাজে নিয়োজিতরা পুরোপুরি বেকার হয়ে গেছেন।
এই
গৃহকর্মীদের আশা ছিল, যাদের
বাসায় কাজ করছেন তাদের
কাছ থেকে বেতন ও
ঈদের বোনাস নিয়ে পরিবারের সদস্যদের
জন্য উপহার নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি
যাবেন, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মিলিত
হবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ
হচ্ছে না কারোরই।
গেল
এক মাসের বেশি সময় ধরে
সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলছে।
এ সময় বন্ধ ছিল
গণপরিবহনও। যদিও সম্প্রতি শহরের
ভেতরে চলাচলের জন্য সীমিত পরিসরে
গণপরিবহন চালু হয়েছে। তবে
ব্যাংকসহ অন্য অফিসগুলো খোলা
রাখা হয়। এই অবস্থায়
বিপাকে পড়েন মানুষ।
গেল
বছরের মতো এবারও অসংখ্য
কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কর্মহারা এই মানুষেরা যানবাহন
না পেয়ে বাড়ি ফিরতে
পারেননি। যার ফলে হঠাৎ
করেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে বা ফুটপাতে
দেখা মিলছে চাকরিহারা বা কাজহারা মানুষের।
রমজান
মাসের শেষ দিকে এসে
রাস্তায়, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকতে দেখা
যাচ্ছে অনেককে। কিছু সাহায্যের আশায়
ফুটপাতে দিনভর বসে থাকেন তারা।
সাহায্যের আশায় এত লোক
আগে কখনও দেখা যায়নি।
সন্ধ্যার পর এই অসহায়
মানুষদের দেখা মেলে রাস্তার
ধারে।
রাজধানীতে
যারা রাতে চলাচল করেন,
তারা দেখতে পান অসহায়, কর্মহারা
মানুষের আর্তনাদ। কেউ হাত পেতে
বসে আছে, কেউ সন্তানকে
দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে, কেউ বা পথচারীদের
হাত-পা ধরে আর্থিক
সহায়তা চাইছে। অসহায় মানুষের মলিন মুখ যে
কাউকে একটু হলেও থমকে
দাঁড়াতে বাধ্য করবে।
দেশে
ইতোমধ্যে করোনা কেড়ে নিয়েছে প্রায়
১২ হাজার মানুষের প্রাণ। কিন্তু হাজার মানুষের চাকরি ও কাজ কেড়ে
নিয়েছে অতিমারি করোনাভাইরাস। এই অবস্থায় অসহায়,
দুস্থ ও দরিদ্র মানুষ
নেমে এসেছেন রাজধানীর সড়কগুলোতে।
তাদের
অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন সিটি
নিউজ ঢাকার এই প্রতিবেদক। তারা
বলছেন, কাজ হারিয়ে বেশ
বিপাকে আছেন। একটু সাহায্যের আশায়
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বা
বসে থাকছেন তারা। রাজধানীর হাতিরঝিলের দুই পাশের সড়কে
দুপুর থেকে সন্ধ্যার পরও
সাহায্যের আশায় বসে থাকেন
‘পরিস্থিতির শিকার’ এসব অসহায় মানুষ।
সোমবার
(১০ মে) হাতিরঝিলে বসে
থাকা ছকিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় সিটি
নিউজ ঢাকার। তিনি জানান, তার
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। তার ছোট দুটি
বাচ্চা। আগে গৃহকর্মীর কাজ
করতেন। করোনায় কাজ হারিয়েছেন। হাতে
যা ছিল তা দিয়ে
টেনেটুনে এত দিন চলেছেন।
এখন তার শূন্য হাত।
তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তার ধারে
বসে আছেন। প্রতিদিন সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে যা
পান তা দিয়ে সন্তানদের
নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে
বেঁচে আছেন।
ছকিনা
যেখানে বসে ছিলেন তার
একটু দূরেই অসুস্থ আজিজ মিয়া। তিনি
সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন,
‘আমার পায়ে সমস্যা। আগে
এক বাসায় দারোয়ানের কাজ করতাম। কিন্তু
করোনার কারণে বের করে দেয়া
হয়েছে। এখন আর রাস্তায়
সাহায্যের জন্য হাত পাততে
শুরু করেছি।’
এ
দিকে ইফতারের আগে কিছু খাদ্যসামগ্রী
উপহার নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছেন
সাদিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘করোনার
কারণে অনেকেরই খারাপ অবস্থা। তাই এসেছি কিছুটা
সাহায্য করতে। আমার যতটুকু সামর্থ্য
আছে, তাই দিয়ে সহযোগিতা
করার চেষ্টা করছি মাত্র।’
রাজধানীর
প্রধান সড়কগুলোতে এমন ঘটনা আর
দেখা যায়নি। করোনা ভয়াবহতায় কর্মহারাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে কখনও এমন
অবস্থা ছিল না। এ
জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের
উচ্চবিত্তদের এসব অসহায় মানুষের
সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এলআই/সিআর/এম. জামান