• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২, ০৭:০৯ এএম

কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গত বছরের ৩০ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও ওই বছরের ২৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক আদেশে বলা হয়, সরকারিভাবে অতিরিক্ত আইজিপি মোহা. শফিকুল ইসলামকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর অবসরে যাচ্ছেন মোহা. শফিকুল ইসলাম।

মোহা. শফিকুল ইসলামের অবসরের এখনও ৩৮ দিন বাকি। তবে দিন যত ঘনিয়ে আসছে ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসেবে কে আসছেন, তা নিয়ে পুলিশের নানা মহলে চলছে জল্পনাকল্পনা।

পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পর বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম সম্মানজনক পদ ডিএমপি কমিশনার। কর্মজীবনের সফলতা, সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা- এমন নানা সমীকরণ পার হয়েই ঢাকার পুলিশপ্রধানের পদে বসতে হয়। পুলিশ মহলে ডিএমপি কমিশনার হিসাবে কয়েকটি নাম নিয়ে চলছে আলোচনা। তারা হচ্ছেন বর্তমান ঢাকা রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমান।

১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসাবে যোগ দেয়া ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজি হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে। সততা, নিষ্ঠা, সাহস, ও আন্তরিকতার জন্য তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হয়েছেন। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), ডিএমপি সদর দফতরের উপকমিশনার, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন), ডিআইজি প্রশাসনসহ বিভিন্ন সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

এ ছাড়া পেশাগত ও মানবিক কাজের বাইরে সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পাশাপাশি মানুষের সেবা করার জন্য গড়েছেন উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। তার একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে টেলিকম ভবনে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবান্বিত ভূমিকা তুলে ধরে ডিআইজি হাবিব ২০১৮ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামের একটি বই সম্পাদনা করেন। এ ছাড়া এ বছরের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় হাবিবুর রহমানের গবেষণাগ্রন্থ ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’। তা ছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ বইটি।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাট বাসুদেবপুর গ্রামে সান্দার বেদে গোত্রের প্রায় দুই শ মুসলিম পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এদের কোনো সদস্য মারা গেলে আশপাশের কোনো কবরস্থানে কবর দিতে দেয়া হতো না। এমন করুণ অবস্থা জানতে পেরে ডিআইজি হাবিব সহকর্মীদের সহযোগিতায় একটি জায়গা খুঁজে কিনে এ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে দান করেন। এ ছাড়া তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হিসেবে করে দিয়েছেন পশুখামার। অনেককে পোশাক কারখানায় চাকরি, পার্লার ও খাবার দোকানের ব্যবসা গড়ে দিয়েছেন। মানবিক পুলিশ হিসাবে খ্যাতি পাওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান এখন নতুনভাবে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন।

১৫তম বিসিএসে যোগদান করেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলামের জন্ম ১৯৭০ সালের ১৫ জুন। বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাহাড়া গ্রামে। তিনি নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিটিশ আইনে স্নাতক। তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি গোয়েন্দা শাখায় নয় বছর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার অর্জন উল্লেখযোগ্য। তিনি কর্মজীবনে স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পেয়েছেন।

এ দুই কর্মকর্তার ছাড়াও ডিএমপি কমিশনার হওয়ার তালিকায় আছেন পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (ডেভেলপমেন্ট) হিসাবে কর্মরত মো. আতিকুল ইসলাম এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশপ্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) মাহবুবুর রহমান। আতিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়ায়। তিনি আইপিজিএমআর (ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ) বর্তমানে বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি বিষয়ে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস ১২তম ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন।

অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। এএসপি হিসাবে নরসিংদী জেলা পুলিশে, সার্কেল এএসপি হিসাবে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে এবং এএসপি সদর সার্কেল হিসাবে নেত্রকোনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) হিসাবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন।

জেইউ

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ