 
              প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
 
                 
                            
              ‘মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া জাতির ১৮ কোটি মানুষ বড় মজলুম’বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিগত স্বৈরশাসকের জুলুমের বোঝার ভার জাতিকে এখনো বহন করতে হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে এখনো বাজারে গেলে মানুষের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। তাদের (আওয়ামী লীগ) আমলে গড়া সিন্ডিকেট এখনো সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) ভাঙতে পারেনি। শুধু বাজারেই সিন্ডিকেট নয়, অফিস-আদালত-বাহিনী, সব জায়গায় তাদের সিন্ডিকেট আছে।’
শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন। সম্মেলনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বইঠার নৃশংস হামলা, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতার বিচার, সাড়ে ১৫ বছরের নির্যাতন, খুন, সর্বশেষ গত জুলাই গণহত্যার ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
জামায়াত আমীর বলেন, ‘ডকুমেন্টারিতে আমরা দেখেছি, কী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেমন করে একটি দেশের শাসক তার দেশে গোটা যুবসমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল, ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। হুকুম করল গুলি চালাও, খতম কর, আমার গদি রক্ষা করো। গদি এভাবে রক্ষা হয় না। তারা (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে তারাই সব। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেছিল। তাই গুলি করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়নি, হেলমেট-মুগুর বাহিনীকেও অস্ত্র দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জাতি যে পরিবর্তন আশা করেছিল, সেই পরিবর্তন-সংস্কার এখনো হয়ে ওঠেনি। তার বেশির ভাগ অপূরণ রয়ে গেছে। যারা দেশের দায়িত্বে আছে, দেশের জনগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের এ দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা তাদের বলব, ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করতে হবে। বিপ্লবের (৫ আগষ্ট) চেতনা ধারণ করে সব জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) গিয়ে যেতে হবে।’
দলমত-নির্বিশেষে একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। আমরা যেন সবাই মিলে একটা মানবিক বাংলাদেশ গঠন করতে পারি। একা জামায়াতে ইসলামী এটা পারবে না। এটা জামায়াতের একার কাজও না। এই জন্য সবাইকে বলি আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। এটা জাতির জন্য, দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য হই।’
তিনি আর ও বলেন, ‘শিক্ষিত বেকার, এই শব্দটি আর চাই না। শিক্ষিত হলে বেকার হবে কেন, শিক্ষাই তো হাতে কাজ তুলে দেবে। এ জন্য আমরা যুবকদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। আমরা যুবকদের লুটেরার হাতে, চাঁদাবাজের হাতে পরিণত করতে চাই না। ওদের হাতে অবৈধ অস্ত্র তুলে দিতে চাই না। আমরা চাই, হাতগুলো হোক কর্মীর হাত। তাদের যুবকেরা তাদের স্বপ্নের মতো কর এই জাতিকে গড়ে তুলে পারে। ’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেই দেশে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত—আমাদের একজন মা, একজন সহোদর বোন, একজন ঔরসজাতক মেয়ে একাকী রাস্তা অতিক্রম করবেন, কিন্তু কোনো জালিম চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। ওই জায়গা আমরা তৈরি করতে চাই। আমরা মায়ের জাতিকে ওই মর্যাদায় নিতে চাই। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। নাগরিকের যার যার পূর্ণ মর্যাদা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।’
আমীর বলেন, ‘স্বৈরাচারের পরিণতি দেখে আমি এবং আমরা সবাই যেন শিক্ষা নিই। যেই এ পথে হাঁটবে, তাদের জন্য ধ্বংস ও অপমান অনিবার্য। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার ) আলেম-ওলামাকে বেইজ্জত করেছে, রাজনৈতিক দলকে করেছে, ছাত্রদের করেছে, ছাত্রীদের বেইজ্জতি করেছে। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল। এত অহংকারী ছিল যে তারা কাউকে পরোয়া করত না। মানুষকে উপহাস করে তারা আনন্দ পেত। আল্লাহ তাআলা তাদের পাওনা কিছুটা পাইয়ে দিয়েছেন। বাকি আরও কিছু পাওনা এ দেশের মানুষ দেখতে চায়। তবে মূল পাওনা হবে আদালতে-আখেরাতে। আমরাও যদি কোনোরূপ এ রকম অন্যায়-অপরাধ করি, আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে ওই পাওনার জন্য।’
সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের জামায়াতের সাবেক নেতাদের বিচারের নামে হত্যার অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সেই বিচারক এবং এর নেপথ্য নায়ক শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘অনেকে ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। ষড়যন্ত্র হচ্ছে, হবে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, হবে। হত্যা হয়েছে, হবে। এটা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়েছে, মুসলমানরা থেমে যায় না। সামনে যে চ্যালেঞ্জ, আমরাও থেমে যাব না। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের বারবার স্বাধীন হতে হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিল, ১৯৭১ সালে হয়েছিল, ২০২৪ সালে হয়েছি। এবার আমরা একটি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু দুর্নীতি, নেগেটিভ দিকগুলো থেকে স্বাধীন হয়নি। পরিপূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আমাদের আরেকটি স্বাধীনতার যুদ্ধ করতে হবে।’
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারী এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো: সেলিম উদ্দিন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনের পর সদস্যরা ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির পদে গোপন ভোটাভুটিতে অংশ নেন।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      