
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান সংকট নিরসনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের ডেকেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা ২৬ জুন বিকাল ৫ টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদেরকে তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার প্রত্যাশা করে যে, এই আলোচনার মাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যার যার দপ্তরে অবস্থান করে অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসগুলোতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার জন্যও অর্থ উপদেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন।
কলমবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে এনবিআরের কার্যক্রম। কর্মকর্তাদের ‘নিপীড়নমূলক বদলির’ আদেশ প্রত্যাহার এবং চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে শনিবার থেকে সব কর অঞ্চল, ভ্যাট অফিস এবং কাস্টমস স্টেশনে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ২৪ জুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। এরইমধ্যে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার ডাক দিলেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠন, অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন সহযোগীগণ রাজস্ব কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়নের কাজ পৃথকীকরণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং প্রণীত নীতি বাস্তবায়নপূর্বক রাজস্ব আহরণ-এ দুটো কার্যক্রম পৃথকীকরণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ তাদের স্ব-স্ব অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন করে মার্চের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করেন। দাখিলকৃত অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জিত আকারে ১২ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঘণ্টাব্যাপী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, রাজস্ব সংস্কার কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনাক্রমে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার পর উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতদসত্ত্বেও আন্দোলন চলমান থাকায় ২৫ মে অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে মর্মে অবহিত করা হলে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। পরে ২২ জুন থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আবারো আন্দোলন শুরু হয়।
এদিকে ২৩ জুন আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতোমধ্যে জারি করা প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে মঙ্গলবার (আজ) আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতির পাশাপাশি চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। এ সময়ের মধ্যে বদলির আদেশ বাতিল করা না হলে ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলমবিরতি চলবে। ২৭ জুনের মধ্যে বদলির আদেশ বাতিল এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সচিব এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে ২৮ জুন থেকে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৭ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একটি জনবান্ধব ও সেবাধর্মী এনবিআরের রূপরেখা দেবে ঐক্য পরিষদ। যাতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, অটোমেশন, সার্ভিস ডেলিভারি, ইন্টেগ্রিটি, জবাবদিহি, চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হবে।