
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১০:২০ এএম
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আজ (৮ আগস্ট) ১ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। সেদিন ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এর আগে ৩৬ দিনের আন্দোলনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হতাহত হন। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
এই সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র এসেছে, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচারসহ সব খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এছাড়াও ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শেষে ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়ার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তবে প্রত্যাশার পাহাড় নিয়ে দায়িত্ব নেওয়া সরকারের ১ বছরে কতটা পূরণ হয়েছে— বছর শেষে আছে এমন প্রশ্নও।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আইনজ্ঞরা বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও মব সন্ত্রাস ঠেকাতে সরকার অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। বিভাজনও বেড়েছে সমাজে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন বিচার ও সংস্কারের গতি নিয়েও।
আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের ধরণ গতানুগতিকই রয়েছে। গত দেড় দশক পুলিশ আইন অনুযায়ী চলেনি, এখনও তাই। জামিন বাণিজ্যও আগের মতো চলমান।
তিনি আরও বলেন, বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব বিষয় যেন আলোচনার বাইরে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মব’ সন্ত্রাসের সঙ্গে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ওপর যে দৃশ্যমান অত্যাচার, সেসবের বিপরীতে সরকারের জোরালো অবস্থান দেখা যায়নি। এমনি সরকারের ভেতরের অনেকেই এই কর্মকাণ্ডগুলোকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টাই করেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে যে সমস্ত তৎপরতা আগে চালু ছিল, সেসব এখনও চলমান। বড় ব্যাবসীয়ারাও অনেকটা একই পন্থায় টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ঋণখেলাপির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এদিকে এসব কিছুর মধ্যেই গত ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপনের দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পরবর্তী রমজানের আগেই, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে।’
৬ আগস্ট, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধ প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
৭ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগামী সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে।
সরকার ইতিমধ্যে একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে: নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। এসব কমিশন তাদের সুপারিশমালা জমা দিয়েছে এবং সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ বছরের জুন মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৫ মাসে সর্বনিম্ন। এছাড়াও প্রবাসী আয় হয়েছে রেকর্ড ৩০.৩৩ ডলার। রফতানি বেড়েছে ৯ ভাগ।