
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৯:২৫ পিএম
যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা এখন অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, দেশের ওপর একরকম ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে—এ প্রশ্ন আমাদের মধ্যে বড় করে আসছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংস্কার কার্যক্রম মনিটরিং করতে বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এ সরকারের কি আকাঙ্ক্ষার অভাব, নাকি স্বার্থের সংঘাত, নাকি অন্য কিছু?’
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে সংস্কারের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি তৈরি হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আর মাত্র ছয় মাস বাকি, এখনো প্রক্রিয়া শেষ না করলে সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কী কী সংস্কার হবে, আমরা সেটা এখনো জানি না।
সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কোনো একটি লিখিত কাগজে ৩০টি দল স্বাক্ষর করলেই তো আর সংস্কার হয় না। এসব বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশ লাগে, অধ্যাদেশ লাগে, নির্দিষ্ট বাজেট লাগে। কিছু দল বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু কী সংস্কার হবে, কীভাবে হবে, সেটা আমরা এখনো জানি না।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে সবার প্রত্যাশা ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। কিন্তু গত এক বছরে সেই সংস্কার কার্যক্রম কতদূর এগিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তার অবশিষ্ট সময়ে সংস্কারকে আর কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার কতটুকুই-বা প্রতিফলিত হবে- এগুলো এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো দেখার জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ উদ্যোগ শুরু করছে। যার মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর বা অংশগ্রহণ কতটা থাকে, সেটা দেখার চেষ্টা করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের আলোচনা আছে। কিন্তু যারা সংস্কার করবেন, তারা কতটা অনুধাবন করছেন? এখানে রাষ্ট্র ও সরকারের সক্ষমতা এবং ইচ্ছার বড় বিষয় জড়িত। তাছাড়া আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক এলিটদের সংস্কারবিরোধিতার বিষয়ও রয়েছে। তাই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ, সেটাও দেখতে হবে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগের অনেক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়নি। এবার কি হবে, সেটার জবাব জরুরি।
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।