• ঢাকা শুক্রবার
    ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাল্টাপাল্টি হাট বসেছে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২, ০৯:৩৬ পিএম

পাল্টাপাল্টি হাট বসেছে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে

মু আ কুদ্দুস

দৃষ্টি সবার ১০ ডিসেম্বরের দিকে। এ নিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের বড় রাজনৈতিক দুই দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এটি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। স্বাধীনতার পর মানুষ অনেক রক্ত দেখেছে, আর রক্ত দেখতে চায় না। এখনো স্বাধীনতা যুদ্ধে সন্তান হারানো মায়েরা কাঁদেন। এখনো বুলেটের সেই ভয়াবহতা বুকে নিয়ে বেড়ায় পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধারা। আমাদের একাত্তরের সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। ভুলে যায়নি একাত্তরের সেই নির্মম ইতিহাস। ভুলে যায়নি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রির ঘটনা। ভুলে যায়নি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা। আমরা কোনো ইতিহাসই ভুলিনি। বাঙালী জাতি চায় না আর কোনো ইতিহাস হোক এই বাংলার মাটিতে। এ জাতি শান্তি চায় বাঁচতে চায় স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে। কোনো ঘটনাই চায় না বাংলার স্বাধীন মানুষ।

এ যেন দেশের মানুষকে নিয়ে দাম কষাকষি চলছে। কথা আর জেদের লড়াই চলছে মাঠে-ময়দানে এবং মানুষের মুখে মুখে। নেতারা বলছেন, খেলা হবে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কিসের খেলা।

১০ ডিসেম্বর নিয়ে এক বিভীষিকাময় সৃষ্টি হয়েছে জনমনে যেটি কারো কাম্য নয়। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হাট বসেছে দুই দলের মধ্যে। এ যেন দেশের মানুষকে নিয়ে দাম কষাকষি চলছে। কথা আর জেদের লড়াই চলছে মাঠে-ময়দানে এবং মানুষের মুখে মুখে। নেতারা বলছেন, খেলা হবে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কিসের খেলা।

অনেকের মধ্যে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো- আগামী ১০ ডিসেম্বর কিংবা তার পরবর্তী সময়ে দেশে কি কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে? 

২৯ অক্টোবর রংপুরের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পরে সরকার পতনের আন্দোলন  হবে। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সরকার পতনের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। অনেকের মধ্যে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো- আগামী ১০ ডিসেম্বর কিংবা তার পরবর্তী সময়ে দেশে কি কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে? রংপুরের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব আগামী নির্বাচনের একটি রুপরেখাও প্রদান করেন।

কিছুদিন আগে যখন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশের সব কিছু পরিচালিত হবে খালেদা জিয়ার কথায়। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। তাদের কোনো কোনো নেতা বলছেন, তাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।

এদিকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে অথবা সরকারকে পদচ্যুত করা হবে। তারপরে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সেই সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

তার ভাষ্য অনুযায়ী নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে এবং বিএনপি সরকার দেশের সব সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ১০ ডিসেম্বর  হচ্ছে বর্তমান সরকারের পতন ও অন্যটি হলো- সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে বন্ধ করা। যাতে করে গত পার্লামেন্ট নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এক দলীয় বা একতান্ত্রিক নির্বাচন না করতে পারে।

বিরোধী দল ও সরকারি দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্য হরহামেশাই শোনা যায়। আর এটি রাজনীতিতে নতুন নয়। দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসলেই এ ধরনের বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্য প্রদানে পারদ বেড়ে যায়। ফলে রাজনৈতিক নেতারা  নিজের পক্ষে জনমত নিতে চোখের জল ছাড়তেও আপোস করেন না। অনেক সময় জনগণের বাহবা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে উসকে দেয়ার একটা প্রবণতা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। 

অন্যদিকে বিরোধী দল যেহেতু ক্ষমতার বাইরে থাকে তাদের মূল প্রচেষ্টা থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন বা কাল্পনিক বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করা। গত ১৪ বছর ধরে বিরোধী নেতৃবৃন্দ এ কাজটি করে আসছেন। তবে তারা কোনোভাবেই জনগণকে তাদের এ সব বক্তব্য বিশ্বাস করাতে সক্ষম হননি।

এবার নজর দেব ১০ ডিসেম্বরের দিকে। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন ১০ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে যে বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে- বিএনপি গত প্রায় দুই মাস ধরে বিভাগীয় পর্যায়ে জনসভার আয়োজন করেছে। তাদের সেই জনসভার ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকাতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের বিষয়ে তারা একটি ঘোষণা প্রদান করেছে যেখান থেকে তারা নির্বাচন সম্পর্কে একটি দিক নির্দেশনা প্রদান করবে। যেহেতু বিভাগীয় জনসভার ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বরের জনসভার আয়োজন করা হবে, অতএব অনেকেই বলবার চেষ্টা করছেন যে, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা থেকে বিএনপি হয়তো নির্বাচনের  রুপরেখা উপস্থাপন করতে পারে

এর আগে রংপুরের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোটামুটিভাবে নির্বাচনের রুপরেখা প্রদান করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। ফলে ১০ ডিসেম্বরের জনসভায় নতুন কোনো বক্তব্য থাকবে না, থাকবে শুধু আন্দোলন।

দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাবে? কিংবা ১০ ডিসেম্বরের পরে এমন কি ঘটনা ঘটবে যার ফলে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকবে না? বিএনপির মনে রাখতে হবে গত ১৪ বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বিপুল উন্নয়ন করেছে। পদ্মা সেতুসহ ১০০ সেতু উদ্বোধন হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ফলাফলের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেক গুণ। নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ফলাফলের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেক গুণ। নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে- সংবিধানের ধারার আলোকে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করে সফল হয়নি।  সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ১০ ডিসেম্বরের নামে তারা জনমনে ভীতি সঞ্চার করার চেষ্টা করছে। এই কৌশল তাদের জন্য কোনো কার্যকর ফলাফল বয়ে আনবে না। অতএব ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্য একটি দিনের মতোই সাধারণ দিন হিসেবে অতিবাহিত হবে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

দেশের এমন এক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ভূমিকা অরাজকতার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে পারে। দেশের মানুষ বিশৃঙ্খলা চায় না। তারা চায় শান্তি। রক্তপাত, বা হামলা মামলা এড়িয়ে সুন্দর সমাধান চায় এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। তাহলেই গণতন্ত্র পৌঁছাবে দেশের মানুষের কাছে। দেখা যাক কি হয় সেদিন? সময় বলে দিবে ১০ ডিসেম্বর কি ঘটতে চলেছে।

 

কিউ/এএল/এআরআই

আর্কাইভ