• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম

দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও শাহ মো. আবু জাফর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফরকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও শাহ মো. আবু জাফরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা যায়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সোমবার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। এছাড়া  বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়েছেন দলের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। বর্তমানে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

একরামুজ্জামানের ঘনিষ্ঠরা সমকালকে জানিয়েছেন,সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা এবং আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নবম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপি যেখানে আন্দোলন করছে, এমন সময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার মনোনয়নপত্র সংগ্রহে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে মনোনয়ন তোলার কারণ স্পষ্ট করেননি একরামুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে আমার এ মুহূর্তে বলার মতো কিছু নেই। এখনই সবকিছু স্পষ্ট করতে চাচ্ছি না।

নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন বলেন, বিএনপির যে কাউকে আমরা নির্বাচনে স্বাগত জানাই। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা নির্বাচনে আসছেন– এটা খুশির খবর। নাসিরনগরের নির্বাচন আরও প্রাণবন্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করছি।

নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন তুহিন বলেন, আমাদের নেত্রী কারাবন্দি। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে মাঠে আন্দোলনে আছি। আর নেত্রীর উপদেষ্টা একরামুজ্জামান আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে যাবেন। এটা নিতান্তই উনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই।

অন্যদিকে নির্বাচনের আগে দল পাল্টান সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর। বিএনপি ছেড়ে তিনি যোগ দেন ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। দলটিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিএনপি ত্যাগের আগপর্যন্ত তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। আবু জাফর ফরিদপুর-১ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে বিএনএম-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। শাহ জাফরের দল পরিবর্তনে আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে নয়া মেরুকরণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে তিনি বাকশালে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ফরিদপুর-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর জাতীয় পার্টি-এরশাদ থেকে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে (না-ফি) যোগ দেন। ২০০৩ সালে সেটি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের আব্দুর রহমানের কাছে এক লাখ ৫ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন।
   
এক প্রতিক্রিয়ায় শাহ মো. আবু জাফর জানান, তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচন করতেই বিএনপি ছেড়ে বিএনএম-এ যোগ দিয়েছেন। গত চার-পাঁচ দিনের সিদ্ধান্তে তিনি দলটিতে যোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। হামলা-মামলার শিকার হয়ে তাঁর অনুসারী বিএনপির চার-পাঁচশ লোক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী কারারুদ্ধ হয়েছেন। তাদের বাঁচাতে এই মুহূর্তে বিএনএম-এ যোগদান ছাড়া তাঁর আর কোনো বিকল্প ছিল না। 
 

আর্কাইভ