
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দলে দলে ভাগ হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সবাই বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেই কেবল তারা সড়ক ছাড়বেন।
শাহবাগ মোড় বন্ধ করে আন্দোলনকারীরা আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের সবার স্লোগানের মূল বিষয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
শাহবাগ চত্বরে বিজ্ঞাপন বোর্ডের নিচে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ইসলামী ছাত্রশিবির, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও আলাদা আলাদাভাবে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী ও তার কিছু অনুসারীকেও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পতাকাসহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি–সংবলিত পোস্টার দেখা যায়।
আন্দোলনকারীরা ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘এই মুহূর্তে ব্যান (নিষিদ্ধ) চাই, আওয়ামী লীগের ব্যান চাই’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ এবং ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’—এ রকম বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
শুক্রবার রাত ৯টায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। শাহবাগেই আওয়ামী লীগের কবর খুঁড়ব। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তী সরকার) দেরি করলে শুধু শাহবাগ নয়, সারা বাংলা ব্লকেড দেব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ মাহমুদুর রহমান খান সোহেলের স্ত্রী মরিয়ম খানম বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা আমাদের প্রাণের দাবি। ৫ আগস্টের পর এত দিন হয়ে গেলেও কেন সেটি করা হয়নি? কেন দাবি আদায়ে মাঠে নামতে হচ্ছে?
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে নয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সাধারণ জনতা হিসেবে এখানে এসেছি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে বাংলার জমিনে রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। অবিলম্বে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পার্শ্ববর্তী সড়কে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত গণসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন বাংলাদেশ টাইটেল পাবে ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’। আমরা সেই টাইটেল দেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ আগে মানুষের সমাগম করার জন্য এ জায়গা বেছে নিয়েছিলাম। এ জায়গা থেকে আমরা এখন রাস্তা ব্লকেড করব।
তিনি আরও বলেন, ইন্টারিমের কানে আমাদের কথা পৌঁছায় নাই; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কানে আমাদের আওয়াজ পৌঁছায় নাই; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহতদের আওয়াজ পৌঁছায় না, আহতদের আর্তনাদ পৌঁছায় না, আমরা এখান থেকে গিয়ে শাহবাগে অবরোধ করব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমরা জায়গা ছাড়ব না।
এর আগে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্র-জনতাকে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। রাত পেরিয়ে শুক্রবার সকালে এনসিপির নেতাকর্মীদের যমুনার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।