
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ফের উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ। ইশরাকের মেয়রের পদ, ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার, সংসদ নির্বাচন, করিডরসহ আরও কয়েকটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি রাজপথ ছিল উত্তাল। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টাসহ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগেরও দাবি জানায় বিএনপি। এসবের মধ্যে বুধবার করিডর ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে সেনাপ্রধানের উদ্বেগজনিত বক্তব্য ধোঁয়াশা আরও বাড়িয়েছে। সেই রেশ না কাটতেই পরদিনই (বৃহস্পতিবার) সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ আরও কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সরকারকে আরও চাপে ফেলেছে।
অন্যদিকে, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে গত বুধবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কিন্তু দলটির কঠোর সমালোচনা করে এনসিপিকে পাল্টা রাজনৈতিক চাপে ফেলেছে বিএনপি।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো এবং ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে সরকারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।
রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে পদত্যাগ করতে হবে।
এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরকে সামনে রেখে সংসদ নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানায় দলটি। এসব দাবি না মানা হলে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার দেওয়া হয়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন সংসদ নির্বাচন, করিডর বিষয়ে আপত্তি এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে সেনাপ্রধান উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, মিয়ারমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে আসা উচিত।
সেনাপ্রধান ও বিএনপির বক্তব্যের পর সরকার এখনও তার অবস্থান জানায়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, ফেসবুকে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দলটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে বিভাজনকে মিটিয়ে ফেলতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নর্থ ও দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরই খাবে। আপনারা তাদের একজন নন। আপনাদের শুধু সাময়িকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের চলমান পরিস্থিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সাক্ষাতের পর তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের (ড. ইউনূস) পদত্যাগের একটা খবর আমরা শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্যার বলেছেন, কাজ করতে না পারলে থেকে কী লাভ। রাজনৈতিক দলগুলা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারলে এভাবে কাজ করতে পারবো না। ড. ইউনূস বলছেন উনি এ বিষয়ে (পদত্যাগ) ভাবতেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতে সরকারের সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেনাপ্রধান ও বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য অনেকটা কাছাকাছি, তাই এর তাৎপর্য অনেক বেশি। সরকারের সামনে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথে হাঁটা কঠিন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে সরকারকে স্পষ্ট করা উচিৎ। একইসঙ্গে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। এটি না হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে।