• ঢাকা শুক্রবার
    ০৪ জুলাই, ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে না’

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে না’

সিটি নিউজ ডেস্ক

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেছেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার ফলে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষকে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কারণ একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী করে তোলে। কিন্তু এ ব্যবস্থায় ভোট ডাকাতির কোনো সুযোগ নেই এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। এজন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সর্বোত্তম পদ্ধতি।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের কাউন্সিল হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের সাংগঠনিক থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, চব্বিশের ছাত্র জনতা একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে দুই সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। ৫০ হাজারের অধিক আহত-পঙ্গু করেছে। ছাত্র-জনতা যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সেই বৈষম্য আবার সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বৈষম্য সৃষ্টির উৎপত্তি স্থল হচ্ছে একক কর্তৃত্ব। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দিবে। যেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন ছিল আমাদের শহীদদের।

তিনি বলেন, জুলাইয়ে আত্মদানকারীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রবাসীরা। অথচ প্রবাসীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছে। তবে কোন কোন দলের কর্মকান্ডে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে একদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার প্রমান হবে, অপরদিকে জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্ভোগ লাঘব হবে।  

‘সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি না থাকায় স্থানীয় সরকারের সকল ক্ষমতা ডিসি-ইউএনওদের হাতে। ফলে জনগণকে আমলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে চলছে দুর্নীতি মহোৎসব। তাই জামায়াতে ইসলামী; রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি জামায়াতে ইসলামীর একার নয়। এই দাবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ও সর্বস্তরের জনগণের। ’

জাতীয় ঐক্যমত তৈরির পিছনে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য এবং জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেই উদ্যোগ গ্রহন করেছে সেই উদ্যোগে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সমর্থন জানালেও একটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। ফলে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টিতে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি নিজের ও দলীয় স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের প্রেরণা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে। নতুন করে যেই ঘাটতি বা ব্যত্যয় ঘটছে তা অচিরেই কেটে যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধ রয়েছে। সেই দায়বদ্ধ থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের স্বার্থ পরিহার করতে হবে।  

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আবু মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, মুহাম্মদ শামছুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়াও সম্মেলনে মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ, থানা আমির, বিভাগীয় সভাপতি, থানা নায়েবে আমির, সহ সভাপতি, সেক্রেটারি ও সহকারী সেক্রেটারি, শ্রমিক কল্যাণ বিভাগের সব থানা সভাপতি ও সেক্রেটারি, উলামা বিভাগীয় সব থানা সভাপতি ও সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সব থানা সভাপতি ও সেক্রেটারি, ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতি ও সেক্রেটারি, কেন্দ্রীয় ছাত্র প্রতিনিধিসহ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ