• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘নির্বাচনি যুদ্ধে’ নেতাকর্মীদের একযোগে মাঠে নামতে হবে: তারেক রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম

‘নির্বাচনি যুদ্ধে’ নেতাকর্মীদের একযোগে মাঠে নামতে হবে: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘নির্বাচনি যুদ্ধ’ মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদের একযোগে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সারা দেশ থেকে আসা দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা পরীক্ষিত; শত অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আপনারা দলকে ধরে রেখেছেন। সেই ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে গত স্বৈরাচারের ১৫ বছরের ষড়যন্ত্র সব আপনারা মোকাবিলা করেছেন। তাহলে এখন কেন সামনের যেই নির্বাচনি যুদ্ধ, তা মোকাবিলা করতে পারবেন না? জনগণকে ঘিরে, দেশকে ঘিরে আপনার দলের যে পরিকল্পনা, কেন সেটা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারবেন না। চাইলেই আপনারা এটা করতে পারবেন, এটা করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

ধানের শীষের পক্ষে জনমত গড়তে হবে উলে্লখ করে তারেক রহমান নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি নিজের এলাকায় যাবেন, আপনি কষ্ট করবেন আপনার দলের পরিকল্পনাগুলোকে সফল করার জন্য। আপনার সামনে থাকবে ধানের শীষ। আপনার সামনে কোনো ব্যক্তি থাকবে না। ধানের শীষকে আপনি বের করে নিয়ে আসবেন। ধানের শীষের পক্ষে আপনি জনগণের মতামতকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। ধানের শীষের জন্য আপনি জনগণের মতামতকে এক জায়গায় ব্যালট বক্সের ভিতরে নিয়ে আসবেন।’

তিনি বলেন, আপনাদের মিটিং করে বললে হবে না। ছোট ছোট গ্রুপ করে ঘরে ঘরে যেতে হবে, মাঠে মাঠে যেতে হবে। কৃষকের ক্ষেতে যেতে হবে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিমের কাছে যেতে হবে। প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে যেতে হবে। ঘরে ঘরে মা-বোনদের কাছে যেতে হবে। স্কুল কলেজের তরুণ-তরুণী, যুবকদের কাছে যেতে হবে।

মাঠে নামলে বিভ্রান্তিকারীও পিছু হটবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনাগুলো জনগণকে জানতে হবে। আপনারা ছাড়া জনগণের পক্ষে জানা সম্ভব না। আপনি যদি না যান, আরেকজন যাচ্ছে, সে গিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে জনগণের মাঝে। কাজেই এই মিথ্যা ও বিভ্রানি্ত বন্ধ তখনই হবে, যখন মাঠে হাজির হয়ে যাবেন। যখন মাঠে হাজির হয়ে যাবেন, তখন এই বিভ্রান্তি কিন্তু সে ছড়াতে পারবে না। আপনার একটা ভিডিও দেখেছেন, কয়েকজন মহিলা গিয়ে এক মহিলাকে বাচ্চার মাথায় রেখে ভোট চাচ্ছেন, তখন মহিলা প্রতিবাদ করে উঠেছে। এরকম ঘটনা হচ্ছে। আপনারা আজ মাঠে নেমেছেন বলেই কিন্তু আজ যারা প্রতিবাদ করার তারাও সাহস পাচ্ছে। আপনি যখন আরও মাঠে নামবেন, তখন এ ধরনের প্রতিবাদ আরো বাড়বে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে যত সহজ ভাবা হচ্ছে, নির্বাচন তত সহজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এক বছর, সোয়া বছর আগে যে কথাটি বলেছিলাম যে, সামনের নির্বাচন যা ভাবছেন তা নয়। আজকে আস্তে আস্তে আমার কথাটা প্রমাণিত হচ্ছে। এখনো যদি আমরা সিরিয়াস না হই, সামনে এ দেশের অস্তিত্ব, সার্বভেৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এটা একমাত্র বাঁচাতে পারে গণতন্ত্র। এবং সেই গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করতে পারেন আপনারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রত্যেকটি মানুষ।’

তারেক রহমান বলেন, বিএনপির পরিকল্পনাগুলো জানাতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই মানুষ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয় সরকার হবে না। যারা বিএনপিকে ভোট দিয়েছে, তাদের পাশাপাশি যারা ভোট দেয়নি তাদের জন্যও কাজ করতে হবে। নির্দিষ্ট কারও জন্য কাজ করা যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি স্বপ্ন দেখাচ্ছে না, বিএনপি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচনের বেশি সময় নেই। দল যার হাতে ধানের শীষ দিয়েছে, তাদের পক্ষে থাকতে হবে। প্রার্থী আসবে, প্রার্থী পরিবর্তন হবে, তবে দল ও আদর্শ রয়ে যাবে।

অন্য রাজনৈতিক দলগুলো মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা বলার দরকার নেই। বাস্তবভিত্তিক যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিলেই হবে। এই কাজ করা কঠিন। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেটি করা সম্ভব হবে।

দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভেৌমত্ব রক্ষা করতে হলে দলের সব নেতাকর্মীকে জনগণের কাছে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে জনরায় আনার আহ্বানও জানান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুব শিগগিরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা খুব শিগগিরই আমাদের মাঝে আসবেন। আমাদের নেতা যেদিন আসবেন, যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন-সেদিন যেন সমগ্র বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। এই কথাটা আপনাদের মনে রাখতে হবে, পারবেন তো, ইনশাআল্লাহ। সেইদিন আমরা গোটা বাংলাদেশের চেহারাকে বদলে দিতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘এখন সংগ্রাম লড়াই হচ্ছে এই নির্বাচনে জয়লাভ করার সংগ্রাম। এই নির্বাচনে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে জয় লাভ করতে হবে। যাতে করে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। অনেক বাধা আসবে, অনেক বিপত্তি আসবে, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক প্রচারণা হচ্ছে, হতে থাকবে। কিন্তু এই সবগুলোকে কাটিয়ে উঠে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বিএনপি কোনদিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খান বাবুল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদষ্টো মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

আর্কাইভ