
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১, ০৩:০৩ এএম
দেশের চিকিৎসকরা নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটিয়ে প্রমাণ করছেন তারা উন্নত বিশ্বের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। গেল মে মাসে প্রথমবারের মতো ২-৩ ইঞ্চি ফুটো করে এমআইসিএস পদ্ধতিতে হার্টের ডাবল ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বুক না কেটে দুই রোগীর এওটিক ভাল্ব সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে একটি টিম জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে মনিরুজ্জামান (৬৫) ও উম্মে হানির (৮০) শরীরে টেভার পদ্ধতিতে সফলভাবে এওটিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেন।
উম্মে হানির ছেলে ঢাকা পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মামুনুর রশীদ জানান, তার মায়ের বুক না কেটে এওটিক ভাল্ব প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এ পদ্ধতি বহির্বিশ্বে অনেক আগেই প্রচলিত আছে। তার মা এখন সুস্থ আছেন।
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, হৃৎপিণ্ড মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন করে। এই রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন ধরনের ভাল্ব থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাল্ব হলো এওটিক ভাল্ব। যেটি হৃৎপিণ্ড হতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। এই ভাল্ব সরু হয়ে গেলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হতে পারে এবং অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে। এইসব উপসর্গ দেখা দিলে দুই বছরের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী মারা যায় এবং সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এওটিক ভাল্ব সরু হয়ে যাওয়া রোগীরা ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের চাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম দিন বাঁচে।
এই রোগের দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। একটি হলো বুক কেটে এওটিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা। এই পদ্ধতিতে রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে হয়। বুকের হাড় কাটতে হয় এবং প্রক্রিয়াটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপূর্ণ সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
আরেকটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বুক না কেটে, অজ্ঞান না করে এওটিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। যাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা টেভার ট্রান্সক্যাথেটার এওটিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট বলেন।
এ পদ্ধতিতে অপারেশনের পরে রোগী হাসপাতাল থেকে তিনদিনের মধ্যে বাসায় চলে যেতে পারেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারেন। তাই সারা বিশ্বে এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এবং জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান আধুনিক এ পদ্ধতিতে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা দুইজনই এখন সুস্থ আছেন।
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার একজন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট। তিনি ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারি হসপিটালে প্রথমবারের মতো অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেন।
এই চিকিৎসা পদ্ধতি ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিতে বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক। সরকারিভাবে আরও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পরবর্তীতে রোগীরা অপেক্ষাকৃত আরও কম খরচে এই জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে বলে ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার মনে করেন।
এ ভাল্ব প্রতিস্থাপন টিমের চিকিৎসকরা মনে করেন, ইতিপূর্বে এই ধরনের রোগীদের দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় বিদেশে উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হতো। এই চিকিৎসা পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে দেশে চালু হলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
জেডআই/ডাকুয়া