• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কুসুমকলি

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২, ০২:৪৫ পিএম

কুসুমকলি

সুদেষ্ণা

দিগঙ্গনার অমতেই সৃজনের সঙ্গে বিয়েটা হুট করে হয়ে গিয়েছিল। বাপ মা মরা মেয়েটা দাদা বৌদির সংসারে ঝামেলা ছিল না ঠিকই কিন্তু প্রত্যেক অভিভাবকের মতোই দায়িত্ব পালন করেছিল দিগঙ্গনার দাদা দীপ্রভ। দিগঙ্গনার বৌদি অত্রিসা সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা আর অসম্ভব ভালো গান গায়। দিগঙ্গনা আর অত্রিসার সম্পর্কটা তথাকথিত ননদ বৌদির মতো নয়, বন্ধুত্বই বেশি, তবে কথা কাটাকাটি যে একদমই হয় না তা নয়। দিগঙ্গনার বিয়েকে কেন্দ্র করেই অত্রিসার সঙ্গে সম্পর্কটা বেশ কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক কান্নাকাটি করে দিগঙ্গনা বলেছিল---" বৌদি এখনই বিয়ে দিও না প্লিজ, সবে মাস্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করলাম, আর কয়েকটা দিন সময় দাও, তারপর .."দিগঙ্গনার কথা শুনে চোখ বেঁকিয়ে অত্রিসা বলেছিল ---" প্রেম ট্রেম করেছিস নাকিরে ছুটি??"

অত্রিসা যখন দীপ্রভকে বিয়ে করে যখন এ বাড়িতে আসে তখন দিগঙ্গনা ক্লাস নাইনে। সদ্য যৌবনে পড়া ননদের সঙ্গে বৌদির ভাব জমাতে বেশি সময় লাগেনি। দিগঙ্গনা নাম বদলে ছুটি নামে ডেকেছিল অত্রিসা। তারপর হঠাৎ একদিন অ্যাক্সিডেন্টে বাবা মাকে এক সঙ্গে হারিয়ে মেয়েটা চোখ মুছেছিল বৌদির আঁচলে। সম্পর্কটা সে দিন থেকে যতটা মধুর হয়েছে ততটাই অভিমানের পাল্লা হয়েছে ভারী।
শুধুমাত্র বিয়ে করার ইচ্ছে নেই বলেই বিয়ে করতে চায় না দিগঙ্গনা, এটা বোঝাতে ওকে এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল যে, ওর মনে হয়েছিল এর চেয়ে একটা সঠিক উপযুক্ত কারণ ওর জোগাড় করা উচিত ছিল। অনেক মান অভিমানের পালা সেরে শেষমেষ ফাল্গুনের হালকা শীত আর বাড়ির গরম পরিবেশে দুচোখে বন্যা বইয়ে শ্বশুরবাড়ির পথে রওনা হয় দিগঙ্গনা। 

দিগঙ্গনা শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেই এত প্রশংসা পেয়েছিল যে, ওর প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল যে, এ বাড়ির সমস্ত লোকজন হয় পাগল নয়তো সবকটা সেয়ানা, ওর মন ভোলাতে চায়। শুধুমাত্র সৃজনের মুখে প্রশংসা তো দূর একবার ওর নিজের নামও শোনেনি। এত প্রশংসার ভিড়ে একবার হয়তো মনে হয়েছিল দিগঙ্গনার, ওই মানুষটার মুখে প্রশংসাগুলো বসিয়ে দেখতে, তারপর যার মুখই ভালো করে দেখেনি সে যে প্রশংসা করতে অপারগ তা বেশ খুশি মনেই মেনে নিয়েছিল দিগঙ্গনা।

বৌদির ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে সৃজনের ছবি দেখে গোবিন্দপুর প্রাইমারি স্কুলের হেডটিচারের মতো লাগলেও শুভদৃষ্টিতে যে কী করে সুশান্ত সিং রাজপুতের মতো সুপুরুষ দেখাচ্ছিল সৃজনকে তা বেশ ভাবিয়ে তুলল দিগঙ্গনাকে। যদিও দিগঙ্গনা মনে করে, ওর ক্যারেক্টার ভীষণ স্ট্রং, তাই ওকে পাওয়া এতটা সহজ কাজ নয়। যাই হোক যাকে ওর পছন্দই নয় সে রাজপুত নাকি ইহুদি নাকি হেডমাস্টারের মতো দেখতে তা জেনে ওর কী আর হবে!! যা কপাল পোড়ার সে তো ওরই পুড়ল। তবু মনে মনে ভেবেছিল দাদা বৌদির কথা মতো বিয়ে করলেও অ্যাডজাস্ট করতে না পারার কারণে বিয়েটা থেকে অন্তত মুক্তি পাবে। কিন্তু সৃজনের বাড়ির লোকজন এত আন্তরিক, এত ভালোবাসে ওকে  প্রথম দিনেই কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার। বউভাতের দিন রাতে ওর কাছে কে শোবে সেই নিয়ে সৃজনের মাসি, পিসি আর মামীদের মধ্যে লটারি হয়ে গেল, সেই সব দেখে শুনে তো দিগঙ্গনার চোখ কপালে। এতটা ভালোবাসবে কেউ ওকে কখনও ভাবেনি দিগঙ্গনা। রিসেপশনের অনুষ্ঠানে সকলের সঙ্গে হাসিমুখে অভিনয় চালিয়ে গেলেও অত্রিসা ঠিক বুঝেছিল তার ছুটির অভিমানের কথা। সৃজনকে ডেকে অত্রিসা বলেছিল ---"সৃজন, ছুটিকে তুমি ভালো রেখো। ও বড় অভিমানী মেয়ে। তোমার ভালোবাসায় ওর সব অভিমান ভুলিয়ে দিও।" সৃজন অত্রিসার কথা শুনে শুধু ঘাড় নেড়েছিল। রিসেপশনে খাওয়া দাওয়া শেষ হতে সব নিমন্ত্রিতরা বাড়ি চলে যাওয়ার পর সৃজন ও দিগঙ্গনাকে নিয়ে সৃজনের বৌদি, দিদি, বন্ধুরা খেতে এলো। খিদের চোটে দিগঙ্গনার তো করুন অবস্থা, তবুও সবার আদরে কোনও রকমে দাঁতে দাঁত চেপে হাসিমুখ দেখিয়ে চলেছে সে। খাওয়ার সময় সৃজনের পাশে বসে সে এক অস্বস্তি। যাকে সে স্বামী হিসেবে মানতেই পারবে না কখনও, তার পাশে বসে খাওয়া বা ছবি তোলার কথা তো ভাবতেই পারে না দিগঙ্গনা । তবুও দিদি, বৌদিদের কথায় সেটাও তাকে হাসিমুখে করতে হচ্ছে, নিজের হাতে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। সৃজন বরং দিগঙ্গনার অস্বস্তি টের পেয়ে বলেছিল---" তোমরা ওকে আর জোর করো না, অনেক তো হলো, এবার একটু নিজের মতো থাকতে দাও।" এই প্রথম সৃজনের গুরুগম্ভীর কথায় কেউ অবাক না হলেও দিগঙ্গনা বেশ টের পেয়েছিল। মনে মনে খুশীও হয়েছিল। কিন্তু দিগঙ্গনার ক্যারেক্টার স্ট্রং, ওকে পাওয়া এত সহজ নয়, তাই কোনো কিছুতেই ওর সৃজনকে পছন্দ হবে না এটা স্বাভাবিক।

অনেক নিয়ম, রীতি, আচার অনুষ্ঠানের পর দিগঙ্গনা যখন সৃজনের ঘরে ঢুকলো, খাটটা তখন ফুলে সাজানো, ঘরের মধ্যে রোমান্টিক পরিবেশ। যাব না যাব না করেও শেষ পর্যন্ত সৃজনের ঘরে চুপিসারে প্রবেশ করলো দিগঙ্গনা। গোলাপ, রজনীগন্ধা আর প্রেমের গন্ধে আবেশিত হয়ে দিগঙ্গনা আর সৃজনের বিবাহিত জীবন শুরু হওয়ার পরিবর্তে গোলাপ গেল শুকিয়ে আর সৃজনের সারারাত জেগেই কাটলো। ঘরে ঢুকেই টিপিক্যাল বউদের মতো দিগঙ্গনা সৃজনকে চোখ রাঙিয়ে বলেছিল ---"দেখুন আমি দাদা বৌদির কথা রাখতে আপনাকে বিয়ে করেছি। আপনি সেই সুযোগ নিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। যদি জোর করেন তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দেব।" সৃজন খুব ভালোভাবেই দিগঙ্গনার কথাগুলো জানত। তাই হাসিমুখে দিগঙ্গনাকে বলেছিল--- "চিন্তা করো না। নিশ্চিন্তে ঘুমাও।" সারারাত নিষ্পলক দৃষ্টিতে দিগঙ্গনার অপরূপ সৌন্দর্যতায় ভরা নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে রাত কেটেছিল সৃজনের। আবার ওই সৃজনই পরের দিন সকালে লাজুক মুখ নিয়ে এমনভাবে বৌদিদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল যে সৃজনকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল দিগঙ্গনা।

বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান শেষে প্রায় এক সপ্তাহ পর সমস্ত আত্মীয় স্বজন চলে গেলে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দিগঙ্গনা। সারাদিন গুরুজনদের প্রণাম আর আঁচলে মাথা ঢেকে নাজেহাল অবস্থা থেকে কোনো রকমে বেঁচেছে মেয়েটা। এই কদিনে বাড়ির সবচেয়ে কাছে পেয়েছে সৃজনের মা স্বাতীদেবীকে। যাকে দিগঙ্গনা মামনি বলে ডাকে। নিজের মা মারা যাওয়ার পর নতুন করে আবার মাকে ফিরে পাবে কখনও ভাবেনি দিগঙ্গনা। 

সৃজনের যৌথ পরিবারে প্রবেশ করে পুরনো জীবন ভুলে যায় দিগঙ্গনা। সারা দিন সকলের সঙ্গে গল্প, হাতে হাতে কাজ, হই হুল্লোড় আড্ডা মিলিয়ে চোখের নিমেষে দিন কাটতে থাকে দিগঙ্গনার। কারোর বৌমনি, কারোর বৌমা, কারোর বউরানী হয়ে বেশ চলছিল, শুধু বউ হয়ে ওঠা হয়নি ওর। সৃজন যখন অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘরে চলে যায়, দিগঙ্গনার মনে হয় সৃজনের কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু ওই, দিগঙ্গনার দৃঢ় বিশ্বাস ওর ক্যারেক্টার স্ট্রং, তাই ওকে পাওয়া এতটা সহজ নয়। এই স্থির বিশ্বাসে মনকে চেপে রেখে দিগঙ্গনার বুক ফাটত কিন্তু মুখ ফুটত না।

বিয়ের কয়েক মাস পর বৌদির সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক সহজ হয় দিগঙ্গনার। দাদা বৌদি যে তার জীবনটা একেবারে ফেলে দেয়নি তা মুখে না বললেও মনে মনে মেনে নিয়েছিল দিগঙ্গনা। শুধু সৃজনই গলার কাঁটা হয়ে রয়ে গেছে ওর জীবনে। না পারছে ফেলতে না পারছে গিলতে। ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না কিন্তু দিগঙ্গনার মন জিতে নেবে সৃজন এ-ই বা কী করে হয়!! সে জন্য দিগঙ্গনা যতটা পারত সৃজনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলত, পাছে না দুর্বল হয়ে পড়ে।

এমনি করে বেশ কদিন চলছিল দিগঙ্গনার জীবন। বিয়ে করে জীবনটা এত সুন্দর হয়ে উঠবে কখনও ভাবেনি দিগঙ্গনা। সুন্দর গুছিয়ে সংসার করছে। হ্যাঁ সৃজনের উপস্থিতি ওর জীবনে নিমিত্ত মাত্র, তবে সেটা ও চায় বলেই, নয়তো...

সে দিন বিকেল থেকে ঝড় বৃষ্টির সঙ্গে তুমুল বজ্রপাত। রাস্তঘাট জনপ্রাণহীন। দিগঙ্গনা ননদ এবং জায়েদের সঙ্গে মুড়িমাখা খেতে খেতে লুডো খেলছে। বাড়ির সবাই বাড়িতেই হয়েছে, শুধুমাত্র সৃজনের জ্যাঠতুতো দাদা রঙ্গন, ছোটোকাকা মল্লার এবং সৃজন ছাড়া। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হলো। সকলের ফেরার সময় পেরিয়ে গেলেও কেউ বাড়িতে না আসায় জেঠি, কাকিমা চিন্তায় পড়লেন। কিছুক্ষণ পর ভিজে একাকার হয়ে ছোটো কাকা বাড়ি ঢুকলেন। চিন্তায় পড়লেন জেঠি আর সৃজনের মা। দুজনেরই ফোন বন্ধ। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর রঙ্গন ফোন করে জানিয়ে দিলো ওর অফিসের পাশেই এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে রাতটা কাটিয়ে দেবে। রঙ্গনের ফোন শেষ হতেই সৃজনের মা স্বাতীদেবী কেঁদে উঠলেন। এই অকাল দুর্যোগে ছেলের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন তিনি। এ দিকে ঘড়ির কাঁটা এগারো ছুঁই ছুঁই। এত রাত হয়ে গেল তবুও সৃজন বাড়িতে না ফেরায় সকলেরই চিন্তা বাড়তে লাগল। দিগঙ্গনা ননদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বুঝতেই পারেনি এতটা রাত হয়েছে আর সৃজন ফেরেনি। বাইরের ঘরে আসতেই দেখল সবার মুখ থমথমে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ছোট কাকা বললেন--- "আমি কী একটু এগিয়ে গিয়ে দেখব?"-- "তুমি কতটা যাবে ঠাকুরপো? তার চেয়ে ওর অফিসের কাউকে একবার ফোন করলে হয় না??"--"দিদিভাই আমি করব? ওর বন্ধুর ফোন নম্বর আমার কাছে আছে..।"--"হ্যাঁ কর.. এখুনি।"
সৃজনের বন্ধু নীলাদ্রিকে ফোন করলো সৃজনের মা। নীলাদ্রি অফিসে যায়নি, সৃজনের খবর জানে না বলে ফোন রেখে দিলো। জেঠুমনি আর ছোট কাকা চিন্তায় ধৈর্য হারিয়ে পুলিশে খবর দেবার কথা বলতেই স্বাতীদেবী ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে না পেরে দিগঙ্গনা বলল--- "কী হয়েছে? "সৃজনের মা দিগঙ্গনার দিকে না তাকিয়েই বললেন--- "বাবু এখনও বাড়ি ফেরেনি। এত বৃষ্টিতে কোথায় আছে ছেলেটা কে জানে!!"-- "চিন্তা করবেন না ঠিক চলে আসবে। "দিগঙ্গনার উত্তরে কেউ যে খুশী হলো না সেটা বুঝে দিগঙ্গনা নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরে ঢুকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত সাড়ে এগারোটা। খাওয়া দাওয়ার পর রাত বারোটা পর্যন্ত বাড়িতে আড্ডা চললেও বাড়িতে আজকের পরিবেশে বড্ড বেশি রাত মনে হচ্ছে দিগঙ্গনার। তারপর সৃজন বাড়ি ফেরেনি বা রাতে বাড়ি না ফিরলে ও কী করবে ভেবে কান্না গলায় দলা পাকিয়ে এলো ওর।

রাত বারোটার পর সবাই থমথমে মুখ করে বসে আছে দেখে দিগঙ্গনা আর থাকতে না পেরে কেঁদে ফেলল। দিগঙ্গনার কান্না থামাতে ব্যস্ত বাড়ির লোকজন খেয়ালই করলো না কলিংবেলের আওয়াজ। দিগঙ্গনাই ছুটে এসে দরজা খুলতেই দেখে ভিজে জামাকাপড়ে সৃজন দাঁড়িয়ে। সৃজনকে দেখে স্বাতীদেবী আদর করে কত বকাবকি করলেন বাড়িতে দেরি করে ফেরার জন্য। বাড়ির বাকি সবাই সৃজনকে দেখে স্বস্তি পেল। বড়রা খুব বকাবকি করলেন। সৃজন বলল--- "মা আমি ঘরে যাচ্ছি, চেঞ্জ না করলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। তোমরা শুয়ে পড়ো , আমি খাব না।"

ঘরে ঢুকেই অন্ধকারে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ পেল সৃজন। ঘরের আলো জ্বালাতেই দেখলো খাটের এককোণায় উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে দিগঙ্গনা।-- "আসলে আমি... মানে বুঝতে পারিনি.. প্লিজ.................ক্ষমা করে দাও.....দিগঙ্গনা...."অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর ভিজে হাতটা দিগঙ্গনার কাঁধের ওপর রাখতেই দিগঙ্গনার সারা শরীর শিরশিরিয়ে উঠল। উল্টোদিকে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো সৃজনকে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর সৃজন দিগঙ্গনাকে সরিয়ে দিতে চাইলে দিগঙ্গনা আরও জোরে চেপে ধরলো। মান অভিমানের পালা চললো বেশ কিছুক্ষণ। অবশেষে বুদ্ধিমতী স্ত্রীর কথায় না পেরে হার স্বীকার করলো সৃজন। আর দিগঙ্গনাও নিজেকে বুঝিয়ে দিলো ক্যারেক্টার ওর স্ট্রং ঠিকই তা বলে নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না এটা কেমন কথা! সৃজন বললো--- "আমি জানতাম একদিন তোমায় নিজের করে পাবই ছুটি।"-- "ছুটি?? ও নাম তো!!"-- "হ্যাঁ অত্রিসা তোমাকে ওই নামে ডাকে। অত্রিসা আমার ছোট্টোবেলার বান্ধবী, তোমার বৌদি।" হতবাক হওয়ার হয়তো আরও বাকি ছিল দিগঙ্গনার । হঠাৎ সৃজন ব্যাগ থেকে বের করলো এক গোছা লাল গোলাপ। দিগঙ্গনার হাতে ফুলগুলো দিয়ে সৃজন বললো--- "কাল ফ্রেন্ডশিপ ডে, আর তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড.."-- "কাল নয় বুন্ধু, আজই তো.. দেখো বারোটা বেজে গেছে.. "দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো পরম ভালোবাসায়। ঠিক যেমন গাছে জল দিলে ফুটে ওঠে কুসুমকলি। ভালোবাসার ছোঁয়ায় মিলন হলো দুই মন ও শরীরের।

এক বছর পর -
দিগঙ্গনা জন্ম দিয়েছে দুই যমজ কন্যা সন্তানের। সারা বাড়িতে খুশীর ছোঁয়া। সকলে খুব খুশী। টেনশনে দমবন্ধ হয়ে যাওয়া সৃজন কাঁপা কাঁপা হাতে দুই মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে হেসে বললো আমার 'কুসুম-কলি'।

আর্কাইভ