• ঢাকা রবিবার
    ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

নিয়োগবঞ্চিত ৩৩০ পুলিশ কর্মকর্তার ১৭ বছর মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ১০:০৬ এএম

নিয়োগবঞ্চিত ৩৩০ পুলিশ কর্মকর্তার ১৭ বছর মানবেতর জীবনযাপন

চাকরি ফেরত পাওয়ার আশায় ভুক্তভোগীরা |ছবি: সংগৃহীত

সিটি নিউজ ডেস্ক

পুলিশ সদরদফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশের পরও এখনও চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি ২০০৭ সালে নিয়োগ বাতিল হওয়া ৩৩০ পুলিশ কর্মকর্তা। ট্রেনিংয়ের আগে আগে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করায় ১৭ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। চব্বিশের গণ-অভ্যুথানের পর আশার আলো দেখলেও তাতেও গুঁড়েবালি। প্রধান উপদেষ্টার দফতরে ফাইল আটকে থাকায় কবে যোগ দিতে পারবেন চাকরিতে, তার উত্তর জানেন না কেউ।

মুন্সিগঞ্জের নিতাই চন্দ্র দাস, ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার। সেই ইচ্ছা থেকেই ২০০৬ সালে অংশ নেন এসআই পদের পরীক্ষায়। সব ধাপ শেষে অপেক্ষা শুধু ট্রেনিংয়ের। ১৭ বছরেও শেষ হয়নি সেই অপেক্ষার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 
নিয়োগ বাতিলের কিছু দিন পর আমার মা মারা যান। পুলিশ বাহিনীতে আমার যোগদান মা-বাবা দেখে যেতে পারেননি। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টের।

পুলিশের নিয়োগে উল্লেখ ছিল চাকরি শুরুর আগে বিয়ে করা যাবে না। রাজবাড়ীর আশরাফুল আলম নিয়ম মেনে ২০০৬ সালের ওই নিয়োগে সার্জেন্ট পদে পরীক্ষায় অংশ নেন। সব ধাপ অতিক্রম করার পর ট্রেনিংয়ের আগে আগে বাতিল হয়ে যায় নিয়োগ। চাকরিতে যোগদানের আশায় দেড় যুগ পরও বিয়ে করেননি।

আশরাফুল আলম বলেন, সব নিয়ম মেনেই আমরা ধাপগুলো শেষ করেছি। এটার ত্রুটিতো আমাদের না। আমি পোশাক পরে আমার বাবাকে স্যালুট দিতে পারিনি। এখন আশায় আছি, অন্তত পোশাকটা পরে যেন আমার বাবার কবরে গিয়ে স্যালুট দিতে পারি।

আর শাহীনুরের দাবি, সব ঠিক থাকলেও বগুড়ার সন্তান হওয়ায় কারণ ছাড়াই বাদ পড়েন তিনি। শাহীনুর বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু বগুড়ার সন্তান হওয়ার কারণে আমাকে ভাইভা থেকে বাদ করে দেয়া হয়।’

২০০৭ সালে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের অজুহাতে ৫৩৬ জন এসআই ও ২২১ জন সার্জেন্টেসহ মোট ৭৫৭ জনের নিয়োগ বাতিল করে তৎকালীন সরকার। সেই নিয়োগ বাতিলের ১৭ বছর পর চব্বিশের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নিয়োগবঞ্চিত ৭৫৭ জনের মধ্যে নিয়োগ বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার ও চাকরিতে যোগদানের আবেদন করেন ৩৩০ জন।

আবেদন যাচাই-বাছাই করে বিবেচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দফতরে ফাইল পাঠায় পুলিশ সদর দফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন। কিন্তু সেই ফাইলটি এখনও আটকে আছে।

কী কারণে নিয়োগ বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার ও যোগদানের আবেদনের ফাইল আটকে আছে এর উত্তর নেই কারও কাছেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, 
একজন ব্যক্তি কিংবা তার পরিবার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে যোগ্যতার মাধ্যমে তার অর্জনকে গ্রহণ করা না গেলে আমাদের চাকরির প্রসঙ্গগুলো প্রতিযোগিতমূলক থাকার দরকারটা কী?

১৯৯১ সালের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হলে ১৯৯৭ সালে তাদের বিশেষ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় চাকরি ফেরত দেয়া হয়েছিল। একইভাবে চাকরিতে যোগদানের আশা ভুক্তভোগীদের।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ