• ঢাকা মঙ্গলবার
    ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন সংগ্রামে হার মানেননি মজিদ, নৌকায় চলছে কেনাবেচা!

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১, ১১:০০ পিএম

জীবন সংগ্রামে হার মানেননি মজিদ, নৌকায় চলছে কেনাবেচা!

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের দুর্গম পল্লী কাউয়াটিকরি। সেই দুর্গম চলনবিলে আজ লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি ওই গ্রামের মৃত আফাজ ফকিরের ছেলে আব্দুল মজিদের (৫৫)। জীবন-সংগ্রামে হার মানেননি তিনি। হার মানলে যে সংসারের হাল থমকে দাঁড়াবে, তাই অসুস্থ অবস্থায়ও জীবনের তাগিদে ছুটে চলতে হয়েছে তাকে। নৌকায় দোকান চালিয়ে সংসার চালাতে হয় মজিদকে।

জানা গেছে, সংসারের বড় ছেলে আব্দুল মজিদ। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেননি। অবশেষে জ্বরে বাবা মারা যায়। এর পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। বর্ষার সময় নৌকায় উপজেলা সদর কিংবা তাড়াশ উপজেলার বারুহাস থেকে মালামাল কিনে আনতে হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে অন্যের বাড়িতে কাজ না করলে পেটে ভাত জুটেনি। এভাবেই জীবন শুরু।

তারপর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাসনায় ৫ হাজার টাকায় শুরু করেন ব্যবসা। ১৫০০ টাকায় নৌকা কিনে কিছু সওদাপাতি কিনে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে কেনাবেচা শুরু। তারপর থেকে কেটে গেছে ৩১টি বছর। এক দিন দোকান বন্ধ থাকলে বাজার হয় না, মাছ কেনার সামর্থ্য থাকে না। বেশির ভাগ সময় ডাল-ভাত খেয়ে কাটাতে হয় পরিবারকে। মজিদের দিন শুরু হয় হাঁকডাক দিয়ে।

নৌকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়ি বাড়ি তার ছুটে চলা। শুধু নিজ গ্রাম নয় পাশের গ্রাম পাড়িল, বেড়াবাড়ি গ্রামেও নৌকা ঠেলে চলে যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জীবন সংগ্রাম। চাল, ডাল, তেল সহ হরেক রকম পসরা সাজিয়ে নৌকায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মজিদ।

সংসারে রয়েছে মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। ছেলের বয়স ৫ বছর। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে বাড়িতেই থাকে। বিয়ে দিলেও অর্থের অভাবে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে পারেননি। মজিদ নিজেও ডায়াবেটিস, প্রেসার, কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। 

আব্দুল মজিদ বলেন, চলনবিলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, অনেকের জীবনে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু আমার জীবনে পরিবর্তন নাই। তাই আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে স্টিলের বড় নৌকা করে দিলে ভাড়া খাটিয়ে জীবনের বাঁকি সময় কাটিয়ে দিবো।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ঘর দিচ্ছে, আমাকে যদি একটা ঘর করে দিত, তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।

 

টিআর/এম. জামান

আর্কাইভ