• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থানের অভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর ছেড়ে গেলেন ১৭ পরিবার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ০৫:০৬ এএম

কর্মসংস্থানের অভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর ছেড়ে গেলেন ১৭ পরিবার

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের রামপালে কর্মসংস্থানের অভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ঘর ছেড়ে চলে গেছেন ১৭ উপকারভোগী পরিবার। তারা গত দেড় মাসেও ফিরে আসেননি। এর আগে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপজলার গৌরম্ভার নতুন আশ্রয়ন প্রকল্পে  জমি ও ঘর বুঝে নেন তারা। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দশেনা বাস্তবায়নে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভায় সরকারি খাস জমির উপর তৃতীয় পর্যায়ে গত অর্থ বছরে ৬০টি বাসগৃহ নির্মান করা হয়। গত ২১শে জুলাই সেই বাসগৃহ ও জমি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন (ভার্চুয়ালি) করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের সময় ৬০ উপকারভোগীর সবাই জমি ও ঘর বুঝে পান।  তাদের মধ্যে আশ্রায়নের ঘর ছেড়ে চলে যান ১৭ উপকারভোগী। গত দেড় মাসেও ফিরে আসেননি তারা।

সরেজমিনে আশ্রায়নের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  এখানে গৃহ ও জমি পাওয়া বেশির ভাগ লোকের কোন কর্মসংস্থান নেই। আশপাশে এমন কলকারখানাও নেই যেখানে তাদের কর্মসংস্থান হবে। বেশির ভাগ পরিবারের পুঁজি নেই । যা দিয়ে তারা ব্যবসা করবে। তারা আরও জানান এখানে গৃহ ও জমি প্রদানের আগে বলা হয়েছিল তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে। গত দেড় মাসে কেউ ঋণ পায়নি। আমরা ঘর পেয়ছি কিন্তু কাজ না থাকলে খাবো কি? ঋণ পেলে ছোট দোকান কিংবা ভ্যান কিনে চালিয়ে সংসার চালাতে পারতাম। আয় না থাকায় কেউ কেউ ঘর ফেলে চলে গেছে। এ অবস্থায় থাকলে আরও লোক চলে যাবে বলে মন্তব্য তাদের।

উপকারভোগীদের কথার সুত্রে জানা যায়,  ৫৬ নং ঘরের বাসিন্দা রামপালের খলিল, ৫৮ নং ঘরের বাসিন্দা রামপালের নাজমা বেগম, ৫৯ নং ঘরের বাসিন্দা হুড়কার প্রমথ মন্ডল, ৬০ নং ঘরের বাসিন্দা উনতি মন্ডল, ৬১ নং ঘরের বাসিন্দা সবিতা মন্ডল, ৬৭ নং ঘরের বাসিন্দা হুড়কার বেলাই তালতলার আশালতা, ৬৯ নং ঘরের বাসিন্দা তাপস কুমার বিশ্বাস, ৭৭ নং ঘরের বাসিন্দা ইউনুছ আলী, ৭৮ নং ঘরের বাসিন্দা অজ্ঞাত, ৭৯ নং ঘরের বাসিন্দা বারুইপাড়ার জাহানারা বেগম, ৮০ নং ঘরের বাসিন্দা ছবেদ আলী, ৮৩ নং ঘরের বাসিন্দা রহিমা বেগম, ৮৪ নং ঘরের বাসিন্দা রিপন, ৮৫ নং ঘরের বাসিন্দা তাপস সহ রামপালের হামিম শেখ, ফরিদা বেগম, উজ্জল ডাকুয়া ও আলামিন হোসেন। ঘর ও জমি বুঝে নিয়ে আশ্রায়ন ছেড়ে চলে গেছে পূর্বের ঠিকানায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই আশ্রায়ন কেন্দ্রে বসবাস করেন এমন  কয়েকজন নারী জানান, যারা আশ্রায়ন ছেড়ে চলে গেছে তাদের বাড়ি-ঘর আছে। এছাড়া এমন অনেকেই আছে যারা এখানে কিছুদিন থাকার পর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে। তারা পুরাপুরি ভুমহীন নয়।

আশ্রয়নের নেতা সাবেক ইউপি সদস্য আ. হান্নান বয়াতী বলেন, ‘যারা ঘরে থাকেনা তাদের বার বার ঘরে আসতে বলা হলেও তারা আসছেনা। মনে হয় তারা আর আসবে না।’

তবে আশ্রয়নের এক বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মতো ভুমিহীন মানুষের জন্য তিনি যদি ঘর ও জমি না দিতেন তা হলে আমাদের বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হতো। এখন আমাদের দরকার কাজ। এখানে কাজের অভাব। এ জন্য মানুষ চলে যাচ্ছে।’

একইভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মল্লিকের বেড় ইউনিয়নে ভূমিহীনদের ১০ টি ঘর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের ঘর বরাদ্দ থাকা সত্তেও প্রায় এক বছর ধরে তারা ঘরে থাকেননি। এরা হলেন মো. হাসান শেখ, মান্নান শেখ ও মো. আলী হোসেন। অভিযোগ রয়েছে ঘর পাওয়ার পর থেকেই বসবাস করেন না তারা। মাঝে মাঝে কেউ এসে খোঁজ নিয়ে চলে যান। এ প্রতিবেদকসহ সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পায়। যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাদের। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিবুল আলম বলেন, ‘যারা চলে গেছে তারা কেন গেল তা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও পিআইও খতিয়ে দেখবেন। তারা যদি আর ফিরে না আসে তাহলে নতুন করে প্রকৃত ভুমিহীনদের ওইসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন ঘর পাওয়া উপকারভোগীকে ডেকে তাদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আর সমবায় অধিদফতর থেকে তাদের ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  একইসঙ্গে তাদের আয়বর্ধক কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

 

এআই/এআরআই

আর্কাইভ