• ঢাকা শনিবার
    ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উঁকি মারছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত তেঁতুলিয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ০৫:৩১ এএম

উঁকি মারছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত তেঁতুলিয়া

দেশজুড়ে ডেস্ক

হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুউচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। খুব কাছ থেকে এই পর্বত দেখতে যেতে হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিলে। সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ৭৯.৮ কিলোমিটার। তবে অবাক ব্যাপার হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রধান শৃঙ্গ।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে পঞ্চগড় জেলা শহর থেকেও দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন। শরতের মেঘ কেটে গেলেই উত্তারাকাশে খালি চোখে দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অবশ্য ইতোমধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলকানি অবলোকন করেছে পঞ্চগড়ের মানুষ। গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে সামান্য উঁকি মেলেছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। খুব কম সময়ের জন্য দেখা গেলেও স্পষ্ট ছিল না। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু সংবাদ প্রচারের পর যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা। অনেকে আবার হোটেলে সীট বুকিং দিয়েও রাখছেন। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত হচ্ছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন। তেঁতুলিয়াকে পর্যটকবান্ধব করে গড়ে তুলতে সহযোগিতায় নেমেছে এলাকার সকল শ্রেণির মানুষরাও। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে প্রস্তুত তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশ।

বাংলাদেশের মধ্যে ভালোভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় পঞ্চগড় থেকে। তবে গত বছর পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিয়েছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে হলে যেতে হবে তেঁতুলিয়ায়। সকালে উত্তরের আকাশ মেঘমুক্ত আর কুয়াশা না থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলবে খুব সহজে। আর কাঞ্চনজঙ্ঘার বিরল দৃশ্য দেখতে তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমান পর্যটকরা। বিশেষ করে তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক ডাকবাংলো অন্যান্য জায়গার চেয়ে খানিকটা উঁচু হওয়ায় সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় পরিষ্কারভাবে। সূর্যোদয়ের বেশ পড়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। বেলা বাড়ারে সঙ্গে সেঙ্গে রোদের তেজ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ক্রমেই মিলিয়ে যেতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবার শেষ বিকেলেও আরেকবার দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে দিনের বেলাতেও দেখা যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭শ’ ফুট উচ্চতার দার্জিলিং পাহাড়ের সাপ চলার মতো আঁকাবাকা সড়কে যানবাহন চলাচলের দৃশ্য। আর পাহাড়ের ঢালে পাহাড়িদের বাড়িঘর। আর রাতের বেলা পাহাড়িদের বাড়ির আলোতে ঠিক যেন আকাশের তারার মতোই দেখা যায় দার্জিলিং। এই দৃশ্য দেখার জন্য অবশ্যই তেঁতুলিয়াতে অবস্থান করতে হবে।

উচ্চতার দিক থেকে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম অবস্থানে হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা একই পর্বতমালার পর্বত কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচটি চূড়ার মধ্যে তিনটি চূড়া পড়েছে উত্তর সিকিমে আর দু’টি চূড়া পড়েছে নেপালের মেচি জোনের তাপলেজাং জেলায়। তবে নেপাল ও সিকিম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সুউচ্চ চূড়া দেখা যায় না। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিল থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সবগুলো শৃঙ্গ। যেখানকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৫৯০ মিটার বা ৮ হাজার ৪৮২ ফুট। এই উচ্চতা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব সোজা পূর্বে ৭৯.৮ কিলোমিটার। সেখান থেকে মাউন্ট এভারেস্টের দূরত্ব ১৭২ কিলোমিটার। সূর্যোদয়ের সময় পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সূর্য উদয় হয়ে আলো ছড়ায় বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। এসময় বিভিন্ন রং ধারণ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেই আলো প্রতিফলিত হয় আশপাশের বিভিন্ন পাহাড়ে। আর এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন টাইগার হিলে জড়ো হয় হাজারও পর্যটক। তবে সে সময় আকাশে মেঘ জমাট থাকলে ওই দৃশ্য দেখার সুযোগ হয় না অনেকের। বিশেষ করে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আকাশে মেঘ কম থাকায় সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই সময়টাতে পর্যটকরা বেশি ভিড় করে টাইগার হিলে। বছরের বাকি সময়টাতে সূর্যোদয় দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ অধিকাংশ সময়ই আকাশে মেঘ জমে থাকার কারণে সকালে সূর্যোদয় দেখা খুবই বিরল।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুব সহজে পঞ্চগড়ে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৪৫৭ কিলোমিটার। আর পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা ১৭ কিলোমিটার। পঞ্চগড় থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। আর বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ১০২১ কিলোমিটার। দেশের যে কোনো স্থান থেকে সড়ক, রেল ও বিমানে করে পঞ্চগড় যাওয়া যায়।

জেডআই/এএল

আর্কাইভ