• ঢাকা বুধবার
    ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২

তারেক রহমানের ফ্যামিলি কার্ডের প্রচার আচরণবিধির লঙ্ঘন, ইসিকে জামায়াত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

তারেক রহমানের ফ্যামিলি কার্ডের প্রচার আচরণবিধির লঙ্ঘন, ইসিকে জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ঘোষিত ‘ফ্যামিলি কার্ড’ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা প্রচার চালানোয় তা নির্বাচনী আচরণবিধির সুনির্দিষ্ট খেলাপ বলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমাদের আজকের বৈঠকের মেইন কনসার্ন ছিল আচরণবিধি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই আমরা আমাদের আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সাহেবের নির্দেশনায় এবং আচরণবিধি মোতাবেক নিজেরাই নির্বাচনী যে সমস্ত প্রচার-প্রকাশনা সামগ্রীগুলো ছিল অর্থাৎ পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড; আমরা নিজেরাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়েছি।

বাস্তবে আরও কম সময়ে সরিয়েছি। আমাদের এটাই ছিল প্রত্যাশা, যেহেতু আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন যাতে ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়। এখানে আমাদের পক্ষ থেকে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকে।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিভিন্ন জায়গাতে নির্বাচনী আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় হচ্ছে, লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা আজকে এই সমস্ত বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যে, ওনাদের (ইসি) পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হয়ে দায়িত্ব পালন করার জন্য। বিভিন্ন জায়গাতে ম্যানুয়ালি যে সমস্ত ব্যানারগুলো লাগানো হয়েছে, বিভিন্ন বিলবোর্ড ইত্যাদির সাথে আবার ভার্চ্যুয়াল অনেকগুলো আছে। আমরা দেখলাম ডিজিটাল যেটাকে বলা হয়, এগুলো ওনাদের পক্ষ থেকে যাতে অপসারণ হয় এবং একটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য এই সমস্ত বিষয় আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

নির্বাচনী ক্যাম্পও কোনো কোনো জায়গায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি, ওনারা নোট নিয়েছেন এবং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেছেন।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, বড় একটি দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্ড আপনারা দেখেছেন, হয়তো আমরা সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমেই দেখেছি, ওনারা বিভিন্ন ধরনের ওয়াদা করছেন যে, আমরা এত লক্ষ, এত কোটি কার্ড দেব। এক একটা কার্ডে এত হাজার, এত লাখ টাকা পাবেন। এই ধরনের অনেকগুলো ওয়াদা করছেন, যেটা নির্বাচনী আচরণবিধির সুনির্দিষ্ট খেলাপ।

এ ব্যাপারে ওনাদের (ইসিকে) পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা বলেছি। যেখানেই যতটুকু আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে এনেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, একটা বড় দলের পক্ষ থেকে ৫০ কোটি কার্ড দেওয়া হবে, প্রত্যেককে এত হাজার করে দেওয়া হবে, এত লক্ষ পুরুষ, এত লক্ষ মহিলা... আপনাদের (গণমাধ্যমের) মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা বলেছি যে, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে একটু দেখেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষে রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় সংবর্ধনা নিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ইসি তো নিরপেক্ষ। ওনারা দেখবেন কোন দল কী করে না করে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না— দায়িত্বটা ওনাদের। আমরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

আগামী ৩ জানুয়ারি জামায়াতও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে, এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে কি না জানতে চাইলে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা যে পিটিশনটা দিয়েছি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে, এটা আশ্বস্ত করেছি— আমাদেরটা হচ্ছে জনমনে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তা দূর করার জন্য একটি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ। আমরা আচরণবিধি মেনে জনসভাটি করব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ যারা নির্বাচনে ভূমিকা রাখছেন, আমাদের আমিরে জামায়াত, সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, ব্যাপক সফর করবেন। বিভিন্ন জায়গাতে তাদের যেতে হবে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি— কেউ অনেক ফ্যাসিলিটিজ পাবেন, ভিভিআইপি ফ্যাসিলিটিজ পাবেন, আবার কেউ পাবেন না, এটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড হলো না।

জামায়াতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি দেখবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিলে ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের আগাম প্রচার বন্ধ করতে হয়। এ ছাড়া ভোটের ২১ দিনের আগে প্রচার চালানো যায় না। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর প্রচার শুরু করতে হয়। আর তা শেষ হয় ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টার আগে।

উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর তারেক রহমান ঘোষণা দেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৫০ লাখ পরিবারকে ‘ফ্যামিলি সাপোর্ট কার্ড’ দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি এখন দলটির নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে বিষয়টি প্রচার করছেন।

আর্কাইভ