• ঢাকা সোমবার
    ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটে ছাড়বো না

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম

ভিটে ছাড়বো না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘যত বড় দুর্যোগ আসুক এবার আর ভিটে ছাড়ব না। ঝড়ের খবর শুনি যতবার ভিটে ছাড়িছি, ততবারই কপোতাক্ষ গ্রাস করিছে। কপোতাক্ষের প্যাটে সব হরাইছি। হারাতি হারাতি স্বামীর রাইখে যাওয়া শেষ সম্বল এই ভিটেটুকুই আছে। তা আর হারাতি চাইনে।’ এভাবেই বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার ফুলবাসী মণ্ডল।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে রোববার সকাল থেকে উপজেলায় সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করছিলেন। এসময় কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গাতিরঘেরি গ্রামের অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়। তবে ওই গ্রামের ফুলবাসি মণ্ডলের (৬৫) নেই কোনো প্রস্তুতি।

জানা যায়, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে যতবার দুর্যোগ হয়েছে, ততবারই গ্রামবাসী বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। আইলায় নদী ভাঙনে গ্রামের অর্ধেকই বিলীন হয়ে গেছে। তখন ফুলবাসী মণ্ডলের স্বামী শতবার মণ্ডলের ৪০ বিঘা ফসলি জমিও ২৫ বিঘাই নদী ভাঙনে বিলীন হয়। ২০২০ সালে আম্পান ও ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাকিটুকুও হারিয়েছেন। এখন তাদের সম্বল বলতে ২ কাঠা জমিতে বসত ঘর।

গ্রামটির পূর্ব পাশ দিয়ে শাকবাড়িয়া নদী এবং পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ নদ বয়ে গেছে। নদ ও নদীর অব্যাহত ভাঙনে গ্রামটি সরু হতে হতে মাঝে মাত্র তিনশ মিটারের মতো দূরত্ব রয়েছে। সেখানকার পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ তীরবর্তী বাঁধের প্রায় ৫শ মিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁধের নীচে গ্রামের অর্ধশত পরিবার টিকে আছে কোনো মতে। দুর্যোগের খবর শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। তবে ফুলবাসী মণ্ডল তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। এবারের দুর্যোগের আগাম খবর শুনেও তার মধ্যে ভীতি কাজ করছে না।

ফুলবাসী মণ্ডলের পরিবারের পাঁচ সদস্য। একমাত্র ছেলে অবিনাশ মণ্ডল বলেন, মায়ের ইচ্ছা বাবার স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটে টিকিয়ে রাখা। তাকে বুঝাইছি প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করি টিকি থাকা সম্ভব না। কিন্তু কিছুতেই তিনি বুঝতি চান না।

তিনি জানান, ২০২০ সালে আম্পান ঝড়ে ১৫ বিঘা ফসলি জমি হারিয়েছেন। পরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে তিন বিঘা বসতভিটের প্রায় সবটুকু নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে যায়। বর্তমানে ২ কাঠার মতো জমি অবশিষ্ট রয়েছে। নতুন বাঁধের পাশে সেই জমিতে ঘর তুলে তারা বাস করছেন। 
[60686
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য গনেষ মণ্ডল বলেন, গত এক দশকে ঘটে যাওয়া দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাতিরঘেরি গ্রামের মানুষ। গ্রামের অর্ধেক পরিবার জমি-জায়গা হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এবার দুর্যোগের খবরে তারা আতঙ্কিত। অনেকেই আগাম এলাকা ছাড়ার প্রস্ততিও নিয়েছেন।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনলেই এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকেন। কারণ দুর্বল বেড়িবাঁধ ভাঙা যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। যতটা না ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জলোচ্ছ্বাসে। সরকার এই এলাকায় মজবুত বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে তখন মানুষের আতঙ্ক কমে আসবে।


এডিএস/

আর্কাইভ