• ঢাকা শুক্রবার
    ০৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

চামড়ার দাম নিয়ে সারা দেশে কারসাজি, দাম না পেয়ে কেউ কেউ ফেলে দেন রাস্তায়

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম

চামড়ার দাম নিয়ে সারা দেশে কারসাজি, দাম না পেয়ে কেউ কেউ ফেলে দেন রাস্তায়

দেশজুড়ে ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার ধস নামানোর কারণে মৌসুমি বিক্রেতারা লাভের মুখ দেখেননি। পানির দামে ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে।ছোট ও বড় গরুর প্রতিটি চামড়া গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে নিয়েছে  সিন্ডিকেট। সারা দেশে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। 

চট্টগ্রাম : কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে নজিরবিহীন কারসাজির ঘটেছে। আড়তদাররা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আড়তদার সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার চামড়া হাতিয়ে নিয়েছে। ছোট ও বড় গরুর প্রতিটি চামড়া গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে নিয়েছেন তারা। দাম না পেয়ে ১০ হাজার চামড়া নগরীতে ফেলে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সেই চামড়া পরিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা টিম। 
আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বর্গফুট হিসাবে চামড়া না কিনে গড়পড়তা  প্রতি পিস চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন। এ অবস্থায় চামড়ার দাম না পেয়ে আড়তে না গিয়ে অনেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে ১০ হাজারেরও বেশি কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে যান। সোমবার রাতে ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেট, বিবিরহাট গরু বাজারের সামনে আতুরার ডিপো, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব ফেলে দেওয়া হয়। পরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা টিম এসব চামড়া কুড়িয়ে নিয়ে তাদের ভাগাড়ে ডাম্পিং করে।

চামড়ার খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, প্রথম পর্যায়ে বড় গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর চট্টগ্রামের চামড়ার বড় বড় আড়তদার কারসাজি শুরু করেন। সাড়ে ৭টার পরপরই আড়তদাররা চামড়া কেনা কমিয়ে দেন। পাশাপাশি মাঠপর্যায় থেকে আড়তদারদের প্রতিনিধিরা হঠাৎ উধাও হয়ে যান। এ কারণে বিপাকে পড়েন চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

তবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন  বলেন, ‘চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি হয়নি। বড় গরুর চামড়া বেশি দামে কেনা হয়েছে। ছোট গরুর চামড়া কম দামে কেনা হয়েছে। চট্টগ্রামে আড়াই লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। দেড় লাখের মতো চামড়া বিভিন্ন উপজেলায় মজুত রয়েছে।’ 

মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, কুরবানির গরু-ছাগলের চামড়ার দাম না থাকায় অনেকেই ছাগলের চামড়া ফেলে দিয়েছেন। ফেলে দেওয়া চামড়া কুড়িয়ে নিয়ে গেছেন মাদ্রাসার লোকজন।  

বগুড়া ব্যুরো অফিস জানায়, আড়ানীর চামড়া আড়তদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, চাহিদা না থাকায় চামড়া কম দামে নিতে হচ্ছে। এ চামড়া কিনেও লাভ হবে কিনা জানা নেই। এরপরও কিনেছি। ফড়িয়াদের কাছে দু-এক টাকা বেশি দিয়ে চামড়া কিনেছি। এছাড়াও সমাজ প্রধানের প্রতিনিধিরা চামড়া নিয়ে আসছেন। তাদের কাছে থেকে ফড়িয়াদের মতো দাম দিয়ে কিনেছি। 

রাজশাহী ব্যুরো অফিস জানায়, ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দামে।  এক বা দুই লাখ টাকার একটি বড় গরুর চামড়া এবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে একেকটি  ছাগলের চামড়ার বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দামে।

রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান  বলেন, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজার টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আমরা ৩০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কিনেছি। সে তুলনায় এবার দাম ভালোই বলতে হবে। 

যশোর ব্যুরো অফিস জানায়, দাম না পেয়ে শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী ছাগলের চামড়া ফেলে গেছেন যশোরের রাজারহাট চামড়া মোকামে। সেই চামড়া কুড়িয়ে মোকামের শ্রমিকরা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন শনিবারের হাটে বিক্রির আশায়। ঈদের পরদিন রাজার হাট চামড়ার মোকামে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। 

হাটের শ্রমিক লিয়াকত খান বলেন, ঈদের দিন বিকালে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে হুজুরেরা ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে হাটে আসেন। প্রতিটা চমড়ার দাম ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি কেউ বলেনি। এতে তাদের রিকশা ভাড়াও উঠছে না দেখে রাগে-ক্ষোভে তারা চামড়া হাটে ফেলে গেছেন। অন্তত হাজারখানেক ছাগলের চামড়া কাল পড়েছিল। সেখান থেকে ২০০ চামড়া আমি কুড়িয়ে আজ লবণ মাখিয়ে রেখেছি। শনিবার হাটের দিন বিক্রির আশায় রয়েছি।

আর্কাইভ