
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৫, ১০:০৭ পিএম
গঠনতন্ত্র বলে, ‘উপদেষ্টা হবেন খ্যাতনামা ক্রিকেটার কিংবা প্রখ্যাত সংগঠক’। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বিসিবির নতুন উপদেষ্টা কমিটিতে যারা এলেন, তাদের কেউই এ দুই পরিচয়ে পরিচিত নন। যেন ক্রিকেটের মাঠে এক প্রান্তে লেখা নিয়ম, আর অন্য প্রান্তে খেলা চলছে নিজের মতো করে।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবির মাসিক সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদনের খবর জানানো হয়। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন আতিথেয়তা খাতের পেশাজীবী মো. শাকাওয়াত হোসেন, ক্রীড়া সাংবাদিক ও শখের ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ হোসেন সামি এবং আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি।
শুরুটা ভালো হলে সুবিধা হতো, মনে করেন টেইটশুরুটা ভালো হলে সুবিধা হতো, মনে করেন টেইট
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শাকাওয়াত ক্রিকেট ট্যুরিজম উপদেষ্টা, সামি ক্রিকেট বিষয়ক পরামর্শক এবং মাহাদি আইন উপদেষ্টা। কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা কি গঠনতন্ত্রে বর্ণিত ‘খ্যাতনামা ক্রিকেটার’ কিংবা ‘প্রখ্যাত ক্রিকেট সংগঠক’?
বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সভাপতির উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে থাকতে হবে এমন কিছু। উপদেষ্টারা সভাপতিকে নীতিগত ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে তারা বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন, এমনকি স্থায়ী কমিটিতেও যুক্ত হতে পারবেন—তবে ভোটাধিকার থাকবে না।
আবিদ হোসেন সামি একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বটে, তবে জাতীয় লিগ কিংবা প্রিমিয়ার ডিভিশন পর্যায়ে তার অংশগ্রহণ নেই। অপর দুইজনের পেশাগত জীবন ক্রিকেট থেকে একেবারেই দূরে।
বোর্ডের নিয়ম যখন স্পষ্ট, তখন এই ব্যতিক্রম কেন? প্রশ্নটা শুধু ক্রিকেট মহলের নয়, প্রশ্নটা গঠনতান্ত্রিক শৃঙ্খলার। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানালেন, গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুলবুল বলেন, ‘দেখুন ক্রিকেট তো এখন শুধু একটা খেলা নয়। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি করা, বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করার লক্ষ্য থাকে। সেজন্যই ক্রিকেট ট্যুরিজম এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাদের ক্রিকেটের পরিচয়কে আরও বড় করে দেবে। সেজন্যই ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত নন এমন একজনকেই ক্রিকেট ট্যুরিজম উপদেষ্টা হিসেবে নিয়েছি। তাছাড়া এখানে আইন-কানুনের বিষয় আছে। আমি তো একজন মাঠের মানুষ, ক্রিকেট প্রশাসন বুঝি। কিন্তু আইন তো আমি বুঝি না। তাই একজন আইনজীবীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল দীর্ঘদিন ধরে আইসিসিতে ক্রিকেট নিয়েই কাজ করেন। তিনি বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর তার কেন ক্রিকেট উপদেষ্টার প্রয়োজন হবে? জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, ‘এখানে তার কাজটা একটু ব্যতিক্রম। ক্রিকেট কিন্তু এখন ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। আইসিসির মেজর আয় ডিজিটালাইজড, ব্রডকাস্ট এবং স্ট্রিমিং থেকেই। সে কারণেই আমার একজন লোক লাগবে যে কি না এই বিষয়ে আমাদেরকে ক্রিকেট প্রমোশনের জন্য ভালো ধারণা দিতে পারবে। আর এ কারণেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সামিকে।’
তবুও তাদের পরিচয় তো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নয়। এরপর বুলবুলের জবাব, ‘আমাদের প্রয়োজনে এখন আমরা সেটা করেছি। তারা সবাই ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট। এজন্যই তাদেরকে নেওয়া।’