• ঢাকা সোমবার
    ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামে সুস্বাদে চুইঝাল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ১২:৪৬ এএম

সুনামে সুস্বাদে চুইঝাল

ফিচার ডেস্ক

বাঙালি খেতে ভালোবাসে খাওয়াতেও ভালোবাসে। অতিথি আপ্যায়নে বাঙালি অন্যতম। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে বাঙালির অতিথি আপ্যায়ন সারা বিশ্বে সুপরিচিত। আর সেটাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন স্বাদের খাবার। তারই একটি হলো চুইঝাল। চুইঝাল খুলনা অঞ্চলে বিখ্যাত। লতাজাতীয় এই গাছ এখন বেশ কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। যে কারণে খুলনার চুইঝালের কদর এখন দেশেই নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

চুইঝাল দিয়ে রান্না গরু কিংবা খাসির মাংস খেতে খুবই সুস্বাদু। মাংসের স্বাদ বাড়ানোর জন্য চুইঝাল ব্যবহারের প্রচলন বহু যুগ ধরে চলে আসছে। চুইঝালের সুঘ্রাণ মাংসকে করে তোলে অতুলনীয় সুস্বাদু। দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝাল একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। এটা খুলনা বিভাগের সর্বত্রই পাওয়া যায়। যেমন- সিলেটের সাতকড়া, লেবুজাতীয় ফল। মাংস, মাটন মাছের তরকারিতে এটি ব্যবহৃত হয়।

খুলনা অঞ্চলে চুইঝালকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে মাংস রান্না করা হয় এটি দিয়ে। রান্নায় এর ঝাল খাবারের স্বাদ বাড়ায় আবার শরীরেরও কোনো ক্ষতি করে না। ঝোল জাতীয় মাছ-মাংস সব কিছুতেই স্বাদ তৈরি করে। এ গাছের কাণ্ড, শিকড়, পাতা, ফুল, ফলের ঔষধি গুণ আছে। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং নড়াইল এলাকায় চুইঝাল মসলা হিসেবে খুব জনপ্রিয়। ভালো মানের চুইঝাল এক হাজার টাকা কেজি।

চুইঝাল গাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল না থাকলেও কাণ্ড ও ডালের স্বাদ ঝাল হয়। এই কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে গরু, খাসি, হাঁস ও মুরগির মাংস, মাছ, সবজিসহ যেকোনো জাতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয়। দেড় থেকে দুই ইঞ্চি টুকরা করে কেটে দিতে হয় তরকারিতে। রান্নায় চুইয়ের ব্যবহারে খাবারে কিছুটা ঝাল স্বাদ বাড়ে। 

আর সেই সঙ্গে রান্নায় আলাদা সুঘ্রাণ তৈরি হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। ঝাল স্বাদের হলেও চুইয়ের নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে। মাংস ধুয়ে নানারকম মসলা মাখিয়ে সেদ্ধ করতে হয়। একপর্যায়ে সেই মাংসের সঙ্গে চুই ঝাল দেয়া।

বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে চুইয়ের আবাদ এবং বাজার রমরমা। শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থায় চুই বিক্রি হয়। চুইয়ের জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতার কারণে দেশ-বিদেশে চুইঝাল বা চুই হোটেল নামে অগণিত হোটেল-রেস্তোরাঁর নামকরণ করা হয়েছে। এসব হোটেলে চুইসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়। চুই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খাবারের রুচি বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে, ক্ষুধামন্দা দূর করে, শরীরের ব্যথা সারায়, শারীরিক দুর্বলতা কমায়, কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া সারাতে কার্যকর ও সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে অব্যর্থ মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ