 
              প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৩, ০২:০৫ এএম
 
                 ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বিশ্বজুড়ে ‘তথ্যযুদ্ধ’ চালাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন অনলাইন বিশ্বকোষটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সম্পাদক ল্যারি স্যাঙ্গার।
গত বুধবার (২ আগস্ট) পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যেসব তাদের পছন্দ সেসব তথ্য মুছে ফেলছে। ফলে একে আর তথ্যের নিরপেক্ষ উৎস হিসেবে বিশ্বাস করা যায় না।
উইকিপিডিয়া হলো একটি ইন্টারনেটভিত্তিক জ্ঞানকোষ, যা গড়ে উঠেছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। উইকিপিডিয়ার প্রযুক্তিনির্ভর ওয়েবপেজকে পড়ার পাশাপাশি সম্পাদনাও করা যায়, আর তা করার জন্য ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া আর কোনো সফটওয়্যার লাগে না। ইন্টারনেট ভিত্তিক বলেইপৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই উইকিপিডিয়া পড়া বা এতে তথ্য যোগ করার কাজ করা যায়।
মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জিমি ওয়েল্স ও ল্যারি স্যাঙ্গার ২০০১ সালে উইকিপিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে উইকিপিডিয়াতে কেবল ইংরেজি ভাষাই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর ২৮৩টিরও অধিক ভাষায় উইকিপিডিয়ার সংস্করণ রয়েছে।
স্যাঙ্গার বলেন, উইকিপিডিয়া মার্কিন প্রশাসনের হাতে নিয়ন্ত্রণের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সিআইএ, এফবিআই ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও রয়েছে। অনলাইন বিশ্বকোষটি এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক সম্পাদকদের দখলে চলে গেছে। বামপন্থি সম্পাদকরা তাদের এজেন্ডার বাইরে যায় এমন কোনো তথ্য মুছে ফেলছে।
এমন দাবির পক্ষে তথ্য-প্রমাণ আছে বলেও জানান স্যাঙ্গার। বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে, ২০০৮ সালের প্রথম দিকে সিআইএ ও এফবিআই’র কম্পিউটারগুলো উইকিপিডিয়া সম্পাদনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।’
প্রশ্ন রেখে স্যাঙ্গার বলেন, ‘আপনার কি মনে হয়, তারা এটা করা (উইকিপিডিয়া সম্পাদনা) বন্ধ করে দিয়েছে?’ স্যাঙ্গারের বক্তব্য অনুযায়ী, ভার্জিল গ্রিফিথ নামে প্রোগ্রামিংয়ের একজন ছাত্র ২০০৭ সালে সিআইএ ও এফবিআই হয়ে প্রথম নিবন্ধ প্রকাশ করে। গ্রিফিথ একটি প্রোগ্রামও তৈরি করেন, যা দিয়ে কোন কোন কম্পিউটার ব্যবহার করে উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো সম্পাদনা করা হয় তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়।
স্যাঙ্গার জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি এবং দেখতে পান, সিআইএ, এফবিআই ও অন্যান্য আরও কয়েকটা সংস্থা উইকিপিডিয়ার তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করছে।
সিআইএ ইরাক যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা মুছে ফেলার জন্য তার কম্পিউটার ব্যবহার করেছে। আর এফবিআই কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির সম্পর্কিত বহু ছবি উইকিপিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলেছে।
সিআইএ তার কম্পিউটার ব্যবহার করে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ, চীনের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আর্জেন্টিনার নৌবাহিনী নিয়ে শত শত নিবন্ধ সম্পাদনা করেছে। এছাড়া সাবেক সিআইএ প্রধান উইলিয়াম কলবি তার নানা কৃতিত্বের কথা উল্লেখ নতুন নিবন্ধ লিখেছেন।
শুধু নিজেরাই নয়, অর্থ খরচ করে অন্যদের দিয়েও নিবন্ধ লিখিয়ে নেয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। স্যাঙ্গার বলেন, (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি) সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে তাদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থ প্রদান করে। উইকিপিডিয়ার মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ‘গোয়েন্দাগিরি ও তথ্যযুদ্ধ চালানো হয়।’
গত বছর জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স (সাবেক টুইটার) কিনে নেয়ার পর মার্কিন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক একগাদা নথি প্রকাশ করেন। এসব নথিতে দেখা যায়, মার্কিন প্রশাসনের ‘অপছন্দনীয় কনটেন্ট’ মুছে দিতে এক্স’র সাবেক নির্বাহীরা কীভাবে এফবিআই’র সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
মেটা’র প্রধান নির্বাহী ও ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও স্বীকার করেছেন, এফবিআইয়ের সরাসরি অনুরোধে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচার ভণ্ডুল করতে কাজ করেছিল ফেসবুক।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘টুইটার ফাইল’ নামে বেশ কিছু গোপন নথি প্রকাশ করেন ইলন মাস্ক। যেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ল্যাপটপ কেলেঙ্কারি খবর সরিয়ে নিতে কোম্পানির সিদ্ধান্তের কথা উঠে আসে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      