• ঢাকা শুক্রবার
    ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় বন্যায় কেন এত ক্ষয়ক্ষতি?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০১:২৪ এএম

লিবিয়ায় বন্যায় কেন এত ক্ষয়ক্ষতি?

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে সৃষ্ট বন্যায় বিধ্বস্ত লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত ৬ হাজার মানুষ। নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার। উপকূলীয় শহর দেরনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফলে মুত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ সহায়তার বহর দেরনা শহরে প্রবেশে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ বন্যার কারণে শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। একটি মাত্র সড়ক কার্যকর রয়েছে।

বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে দেরনা শহর। ধসে গেছে শত শত বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। পানির স্রোতে ভেসে গেছে অসংখ্য গাড়ি।

বন্যায় কেন এত ক্ষয়ক্ষতি
চলতি মাসের শুরুর দিকে (৪ সেপ্টেম্বর) ভূমধ্যসাগর পাড়ের দেশ গ্রিসের ওপর তৈরি হয় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানিয়েল’। এর কারণে শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস সৃষ্টি হয়। সঙ্গে যোগ হয় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত। এ কারণে গ্রিস, তুরস্ক ও বুলগেরিয়ায় ব্যাপক বন্যায় হয়েছে এবং এ দেশগুলোতেও অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। হয়েছে ক্ষয়ক্ষতিও।

ইউরোপের এই তিন দেশের পর ঘূর্ণিঝড়টি ভূমধ্যসাগর পার হয়ে চলতি সপ্তাহে (১০ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। এতে বেনগাজি, বায়দা ও দেরনাসহ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অন্তত শহরে বন্যা দেখা দেয়।

দেরনায় দুটি বাঁধে ধস
ভূমধ্যসাগরের একেবারে তীরে দেরনা শহরের অবস্থান। এটি একটি বন্দর নগর। এখানে প্রায় ১ লাখ মানুষের বাস। ভূমধ্যসাগরের পানি ঠেকাতে সাগরের পাড়ে কয়েকটি বাঁধ রয়েছে। যা বহু বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ডানিয়েলের আঘাতে পুরনো বাঁধগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ধসে পড়েছে।

বাঁধ ধসে পড়ায় ভূমধ্যসাগরের পানি প্রবল বেগে ওয়াদি দেরনা তথা দেরনা উপত্যকায় ঢুকে পড়ে। এক হিসেবে, বাঁধ ধসে অন্তত ৩ কোটি কিউবিক মিটার পানি শহরের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দেরনা শহরের ডেপুটি মেয়র আহমেদ মাদরুদ বলেছেন, শহরটি যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে বেশিরভাগ মানুষ পানির প্রবেশপথে রয়েছে।

মেয়র মাদরুদ জানান, শহর রক্ষার জন্য নির্মিত বাঁধগুলো প্রায় দুই দশক ধরে সংস্কার করা হয়নি। বড় কোনো বন্যা ঠেকানো যায় নতুন করে এমন কোনো অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়নি। এর কারণ লিবিয়ায় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দেশটি।

No description available.

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ন্যাটো বাহিনীর হাতে নিহত হন লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এরপর থেকে রাজধানী ত্রিপোলি কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সরকার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। আর পূর্বাঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী আরও একটি সরকার রয়েছে। যার কেন্দ্র হলো বেনগাজি। চলতি সপ্তাহের বন্যায় বিধ্বস্ত দেরনা শহর রয়েছে এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

বন্যার পানির তোড়ে দেরনা শহরের বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেলিফোন ও ইন্টারণেট সেবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এক কথায় এই মুহূর্তে শহরটি প্রায় বিশ্ববিচ্ছিন্ন। শহরের একটি মাত্র রাস্তা কার্যকর রয়েছে। ফলে বন্যার চারদিন পরও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না।

শহরের এক চতুর্থাংশ ধ্বংস
ডেপুটি মেয়র মাদরুদ বলছেন, বন্যায় শহরের এক চতুর্থাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরের ধ্বংসযজ্ঞ মহাকাশে স্যাটেলাইটেও ধরা পড়েছে। তবে কতগুলো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে তার সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। এটা কয়েক হাজার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এতে শহরের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। তাদের আশ্রয় এখন খোলা আকাশের নিচে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও।

এখন পর্যন্ত ৬ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন এখনও ১০ হাজার হাজার মানুষ। তারাও মারা গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেরনার এক লাখ মানুষসহ বন্যায় অন্তত তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে দেশটির বেনগাজি, সোসি, আল বায়দা, আল মারজ এবং দেরনা শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বন্যার পানি সরে গেলেও উপকূলীয় শহর দেরনায় পানির স্তর বিপৎসীমার ১০ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে চলছে অভিযান। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল কলেজ ও দোকানপাট। এছাড়াও দেশটির প্রধান চারটি বন্দর সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ডানিয়েল আঘাত হানার পরই জরুরি অবস্থা জারি করে কর্তৃপক্ষ।

বন্যা কবলিত লিবিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকে। দেশটির দুর্গত মানুষের জন্য বাংলাদেশও ওষুধ ও শুকনো খাবারসহ ত্রান সামগ্রী পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ