• ঢাকা শনিবার
    ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রোগ যখন বৃক্কে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ০১:১৪ এএম

রোগ যখন বৃক্কে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

বৃক্কে কোনো রোগ হলে সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে রক্ত থেকে অতিরিক্ত তরল ও বিষাক্ত উপাদানগুলো ছেঁকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি থমকে যায়। যার প্রেক্ষিতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয় সহজেই।

‘ইটদিস ডটকম’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় ‘জন্স হপকিন্স’য়ের তথ্যানুসারে জানানো হয়- বর্জ্য, বিষাক্ত উপাদান ও অতিরিক্ত তরল বের করে দেওয়ার পাশাপাশি বৃক্কের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রক্তে প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজ উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ, ‘অ্যানিমিয়া’ বা রক্তশূন্যতার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং হাড়ের শক্তি বজায় রাখা।

বৃক্ক শরীর থেকে বর্জ্য উপাদান বের করে প্রস্রাবের মাধ্যমে যা মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে পৌঁছায়। সেখান থেকে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

বৃক্ক যদি অকেজো বা অকার্যকর হয় তবে রক্ত পরিশোধন প্রক্রিয়াও নষ্ট হয়। ফলে শরীরে নানান ধরনের বিষাক্ত উপাদান জমতে থাকে।

পা ফোলা

পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা এসব স্থানে ফোলাভাব দেখা দেওয়া বৃক্কে রোগের অন্যতম লক্ষণ। এর কারণ হল বৃ্ক্ক সঠিকভাবে কাজ না করায় শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সেই বাড়তি তরল গিয়ে জমেছে কোষে, দেখা দিয়েছে ফোলাভাব বা পানি জমা।

আরেকটি কারণ হতে পারে শরীরে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ে অসমতা, এর জন্যও দায়ী ওই বৃক্কের অকার্যকারিতা।

সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম হল দুটি ‘ইলেক্ট্রোলাইট’। এদের কাজ হল শরীরে তরলের সমতা বজায় রাখা।

বৃক্কের রোগের কারণে শরীরে ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ের ভারসাম্য যদি নষ্ট হয় তবে স্বভাবতই তরলে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং শরীরে পানি জমবে।  

অবসাদ ও দুর্বলতা

বৃক্কে রোগ থেকে অবসাদ ও দুর্বলতা কারণ অসংখ্য। একটি কারণ হল অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। রক্তে লোহিত রক্ত-কণিকার মাত্রা কমে যায় ‘অ্যানিমিয়া’তে। ফলে কোষে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যম থাকে না।

এখানে বৃক্কের ভূমিকা হল ‘এরিথ্রোপোইটিন’ নামক একটি হরমোন তৈরি করে এই অঙ্গ, যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করতে প্রয়োজন। ফলে বৃক্কের সমস্যা হলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমে গিয়ে ‘অ্যানিমিয়া’ দেখা দেয়।

প্রস্রাবের ওপর প্রভাব

বৃক্ক শরীর থেকে বর্জ্য ছেঁকে এনে তৈরি করে প্রস্রাব। এই অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে প্রস্রাবের মাত্রা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

একইভাবে প্রস্রাবের রংয়ে পরিবর্তন দেখেও বৃক্কের সমস্যার আভাস পাওয়ার যায়।

বৃক্ক অকেজো কিংবা অকার্যকর হওয়ার কারণে তা রক্ত সঠিকভাবে পরিশোধন করতে না পারার কারণেই প্রস্রাবে এই উপসর্গগুলো দেখা যায়।

বমি ও অরুচি

জনস হপনিকস জানাচ্ছে, ‘বৃক্কের অকার্যকারিতার কারণে শরীরে যখন বর্জ্য উপাদান জমতে থাকে তখনই বমিভাব, বমি ও খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়। বৃক্ক খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেই এরকম হয়।

অনেকের ক্ষেত্রেই বৃক্কের রোগ তীব্র আকার ধারণ না করা পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই শুধু বৃক্কের রোগ শনাক্ত করা যায়।

চুলকানি

বৃক্ক অকেজো হলে শরীরে যে বিষাক্ত উপাদান জমতে থাকে সেখান থেকে চুলকানি দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি বৃক্কের রোগের কারণে শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের মাত্রায় তারতম্য দেখা দেয়। এ কারণেও চর্মরোগ ও চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিঃশ্বাসের সমস্যা

বৃক্কের সমস্যার কারণে শরীরের অতিরিক্ত তরল গিয়ে জমা হতে পারে ফুসফুসে। যে কারণে দম আটকে আসার অনুভূতিতে ভুগতে হয়।

দম আটকে আসার এই অনুভূতিকে বলা হয় ‘ডিস্পনিয়া’। এর সঙ্গে দেখা দেয় বুকে ব্যথা, কাশি ও কফ, কাশির সঙ্গে প্রকট শব্দ ইত্যাদি।

তবে বৃক্কের রোগ ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি, ‘ক্রনিক অবসস্ট্রাকশন পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)’, ‘পালমোনারি এমবোলিজম’ ইত্যাদির কারণেও ‘ডিস্পনিয়া’ হয়।

বুক ব্যথা

ফুসফুসে পানি জমলে বুকে ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে বৃ্ক্ক পুরোপুরি অকেজো হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ’য়ের চিকিৎসার প্রক্রিয়া হল বৃক্কের ক্ষতির হার ও একেবারে অকেজো হয়ে যাওয়ার গতিকে কমানো। তবে সেটাও সবসময় সফল হয় না।

রোগ তীব্রমাত্রায় পৌঁছালে কৃত্রিম পরিশোধন প্রক্রিয়া ‘ডায়ালাইসিস’ কিংবা বৃক্ক বদলানোই হয় একমাত্র উপায়।

আর্কাইভ