• ঢাকা রবিবার
    ০১ জুন, ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিবন্ধন ফিরে পেলো জামায়াত, প্রতীক নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ১০:৩৫ এএম

নিবন্ধন ফিরে পেলো জামায়াত, প্রতীক নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। তবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এই রায়ের মাধ্যমে বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেলো দলটি।

রায় শেষে জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, এক যুগের বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে জামায়াত তার নিবন্ধন ফিরে পেলো। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো। আমরা আশা করি এই রায়ের পর বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সকলেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। নির্বাচনে জায়াতকে বেছে নিবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি। একইসাথে আগামী সংসদে ভালো বিতর্ক হবে যার মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে বলেও প্রত্যাশা তার।

তিনি আরও বলেন, আজকে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের যে রায় ছিল সেটিকে বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং ইসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি করেন। এর মাধ্যমে জায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পেলো এবং প্রতীকের বিষয়টিও রেফার্ড করা হলো। এজন্য আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি। আশা করি আগামীকালের মধ্যে মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা হাতে পাবো। এই আদেশ আমরা ইসিতে জমা দিবো বাকিটা ইসি আইন অনুয়ায়ী জামায়াতের নিবন্ধন এবং প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন।


এর আগে, গত ১৪ মে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ১ জুন দিন ধার্য করা হয়েছিল।

সেদিন আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।

আদালত কক্ষে জামায়াত নেতাদের পক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসেন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

গত ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলে যায়।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ. সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটকারির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজম।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদনের শুনানির জন্য এদিন ধার্য করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এ দিন ধার্য করেন। আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত বছরের নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজের আদেশ দেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকে।

আর্কাইভ