• ঢাকা সোমবার
    ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধকারে ছিলো অর্ধেক দেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৯:১৪ এএম

অন্ধকারে ছিলো অর্ধেক দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ ছিলো অন্ধকারে। ব্লাকআউট হয়ে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সব জেলা। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বেলা ২টা ৪ মিনিটে গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যায় ৷ এতে দেশের অর্ধেক এলাকা হয়ে পড়ে বিদ্যুৎহীন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। জরুরি সেবাসহ প্রায় সকল প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ব্যহত হয়। চলমান দূর্গাপূজা কেটেছে অন্ধকারে। অফিস, বাসাবাড়ি আর মসজিদে ছিল পানিক সংকট। একই সাথে বিপাকে পরতে হয়েছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়।

টেলিকম সেক্টরের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৪ সালের পর এত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি টেলিযোগাযোগ সেক্টর। এ ধরনের ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় উল্লেখ করে নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এদিকে দেশের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা টেলিকম সেক্টরে সাইবার হামলার আশঙ্কার কথা জানান। তারা বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের আগে টেলিকম সেক্টরে সম্ভবত সাইবার হামলা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারেন। টেলিযোগাযোগ সেক্টরের বিপর্যয়ে গ্রাহক ভোগান্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গতকাল ভোর পাঁচটা থেকেই টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ইন্টারনেট, ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয় দেখা দেয়। যদিও এটি সামগ্রিকভাবে হয়নি তবে ভোগান্তির শিকার হয় প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহক। ?বেলা ১২টার পর থেকে নেটওয়ার্ক সেবার মান বাড়লেও দুপুর দুইটা থেকে পিজিসিবির সঞ্চালন লাইনে বা গ্রিড বিপর্যয় হলে ঢাকা-সিলেট কুমিল্লা চট্টগ্রামসহ দেশের বহুলাংশে টেলিযোগাযোগ সেবায় ৯০ ভাগ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণে কলড্রপ, নেটওয়ার্কের ধীরগতি, এক প্রান্ত থেকে কথা শোনা গেলেও অপরপ্রান্ত থেকে কথা না শোনা, মিউট কলসহ নানা ভোগান্তির শিকার হন গ্রাহকরা।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়েছে বিমানবন্দরও। এ ব্যাপারে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‍‍`পুরো ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। যার কারণে ইমিগ্রেশনের সার্ভার ডাউন। আমরা ব্যাকআপ দিয়ে কাজ করছি। তবে খুব ধীরে কাজ করছে সার্ভার।‍‍`

এদিকে বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে কোনো ব্যাকআপ নেই। যার কারণে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে আসা যাত্রী এবং বিদেশগামী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ঢাকের তালে সরগরম পূজামণ্ডপেও  হ্যাজাক লাইট, চার্জার লাইট, মোমবাতি ব্যবহার করা হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় অনেকেরই আরতি দিতে সময় লেগে যায়। আবার অনেকে অন্ধকার বাড়ি ছেড়ে আরতি দিতেই আসেননি। পূজামণ্ডপের একটি প্রধান আকর্ষণ উচ্চস্বরে মিউজিক। এতে রেকর্ডেড কিংবা লাইভ পারফম করেন অনেকেই। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ মণ্ডপেই চুপ বসে আছে মাইকগুলো। আবার পূজা উপলক্ষে দেশব্যাপী হয় মেলা।  আলোর ব্যবস্থা না থাকায় এই মেলাতেও কমেছে লোকসমাগম।

দুপুর ৩টার পর প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সচিবালয়ের এক কর্মচারী জানান, দুপুর ২টায় বিদ্যুৎ যাওয়ার পর ফটোকপি করা, কম্পিউটারের কাজগুলো সব বন্ধ হয়ে যায়। অফিস ছুটির সময় লিফট বন্ধ থাকায় নিচে নামতে গিয়েও বিপদে পড়েন কর্মচারীরা। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন যারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেন না। তাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

এদিকে ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, দুপুর ২টার দিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা ঘটে। আমাদের বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে। সমস্যা সমাধানে পিজিসিবি চেষ্টা করছে বলে আমাদের জানিয়েছে। এই মুহূর্তে ঢাকা শহরের প্রায় সব জায়গাই বিদ্যুৎবিহীন।

অবশেষে রাত ৮ টার পর থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়। এটি ঠিক হতে আরো সময় লাগবে, এমন পরিস্থিতি ধৈর্য ধরে মোকাবিলা করতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিবি) প্রকৌশলীরা দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় গ্রিড সচল করতে নিবিড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ সেবা চালু করা হবে বলে আশা করা যায়।

 

 

এসএএস

আর্কাইভ